গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের জাতীয় চেতনা, যা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭২-এর সংবিধান এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান।
সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরাম আয়োজিত এক স্মরণসভায় সভাপতির লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান। গণফোরাম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোস্তফা মোহসীন মন্টুর স্মরণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কামাল হোসেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরেও আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারিনি। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের যে রূপরেখা প্রণীত হয়েছিল, তা পরবর্তীতে রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে জুলাই-২৪ একটি রক্তাক্ত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্ট ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে যেমন কাজে লাগাতে হবে, তেমনি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য যাতে বিনষ্ট না হয়- সেদিকেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এ কথাও সত্য যে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তাদের প্রধান কাজ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তবে গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, তা উপেক্ষা করারও কোনো সুযোগ নেই। সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দক্ষতার সঙ্গে বিষয়গুলো সমাধানের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দীর্ঘদিনের সহকর্মী মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঢাকা জেলা গেরিলা বাহিনীর প্রধান হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সফল গণঅভ্যুত্থানে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি সবসময় স্বপ্ন দেখতেন মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। তিনি একজন গণতন্ত্রমনা, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী জননেতা ছিলেন। তিনি সবসময় জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ করেছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নূরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, গণফোরামের এসএম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, এবি পার্টির দিদারুল আলম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আবদুল কাদের প্রমুখ।
মন্তব্য করুন