‘নতুন বাংলাদেশের’ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই ইশতেহারের মূল ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার, সমতা ও গণতান্ত্রিক সংস্কার। ইশতেহারে নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিকের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে দলটি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য দেশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা।
রোববার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপি আয়োজিত এক সমাবেশে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সমাবেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আমরা দায় ও দরদের রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমরা এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনোই ফিরে আসতে পারবে না। জুলাই পদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বলেছি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে; কিন্তু ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিলোপ আমরা ঘটাতে পারিনি। আমাদের দলের জন্ম, এনসিপির জন্ম, আমাদের সকল শ্রম, আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক একবছর পর আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।
নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে বেশ জোর দিয়ে বলা হয়েছে। ২৪ দফা ইশতেহারের প্রথম দফায় নাহিদ ইসলাম বলেন, উপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আমরা বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতির নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে, আমাদের রাষ্ট্রের নতুন যাত্রায়, আমাদের প্রথম অঙ্গীকারই হচ্ছে গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে, আমাদের এই নতুন সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। আমাদের নতুন রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে। এই নতুন সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করব।
এর আগে দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্রেও সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে বলা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, ‘আমরা মনে করি, জুলাই-২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা এবং তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে।’
প্রসঙ্গত, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি মূলত তৈরি হয়েছে ফরাসি বিপ্লব থেকে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, কোনো দেশে আগের শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে নতুন শাসনকাঠামো বা ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা। আগের শাসনব্যবস্থা বদলে নতুন রাজনৈতিক শাসনকাঠামো গ্রহণ করা। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। ওই বিপ্লব চলাকালেই ১৭৯২ সালে ফ্রান্সে প্রথম রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়। ১৮০৪ সাল পর্যন্ত প্রথম রিপাবলিক বলবৎ থাকে। এরপর ফের রাজতন্ত্র শুরু হয় যা চলে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ফ্রান্সে দ্বিতীয় রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়। এভাবে নানা ধাপে ফ্রান্সের রাজনৈতিক কাঠামোতে বদল আসে।
মন্তব্য করুন