মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর দেশে স্বাধীন বিবেকের প্রতীক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শোক জানিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে তারেক লিখেছেন, ‘বামপন্থি প্রগতিশীল রাজনীতির পথিকৃৎ, লেখক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমরের জীবনাবসানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং আমি গভীরভাবে মর্মাহত। স্বাধীনচেতা, নির্ভীক কণ্ঠস্বরের এই বুদ্ধিজীবীর এই মুহূর্তে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া জনমনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। জনগণের সম্মান ও নিদারুণ বেদনাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি এবং সেটিকে প্রতিবাদের ভাষায় মূর্ত করতে পারতেন মরহুম বদরুদ্দিন ওমর।’
তারেক বলেন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা এবং সকল স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রয়াত বদরুদ্দিন উমরের চিন্তা ও লেখনীসহ সক্রিয় তৎপরতা ছিল অবিস্মরণীয়। জাতির নানা ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পর্ব নিয়ে তার গবেষণাধর্মী গ্রন্থসমূহ এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে পাঠক সমাজের নিকট সমধিক সমাদৃত।
বদরুদ্দীন উমর দেশে স্বাধীন বিবেকের প্রতীক ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও লেখেন, ‘মরহুম বদরুদ্দিন ওমর বারবার রাজরোষে পড়া সত্ত্বেও তিনি তার আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন আপসহীনভাবে স্থির। কোনো ভীতি বা হুমকি তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি তার কর্তব্যকর্ম থেকে। স্বৈরতন্ত্রকে উপেক্ষা করে তিনি তার স্বাধীন মতামত প্রকাশে কখনোই কুণ্ঠিত হননি। তিনি এদেশে ছিলেন স্বাধীন বিবেকের এক প্রতীক। আমি মরহুম বদরুদ্দীন উমরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবার-পরিজন, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
এর আগে, রোববার সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বদরুদ্দীন উমর (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, আজ অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনার পর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে জন্ম গ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি ১৯৪৮ সালে বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৫০ সালে বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক ও ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি অর্জন করেন।
বদরুদ্দীন উমর কর্মজীবন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা ত্যাগ করে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় একশ।
বদরুদ্দীন উমরের গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি' (তিন খণ্ডে), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ’ এবং ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’। ২০২৫ সালে বদরুদ্দীন উমরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
মন্তব্য করুন