কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফের ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফন্দি করছে সরকার : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পুরোনো ছবি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পুরোনো ছবি

ক্ষমতাসীন সরকার ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে আবারও নানা ধরনের ফন্দি আঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহনমূলক ও সুষ্ঠনির্বাচনে বিশ্বাসী নন। তাই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা শুনলেই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তার জমিদারীতে কেউ অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য কেউ দাবি করলেই তিনি ক্ষুদ্ধ ও বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অন্যান্য দাবিসহ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের বিএনপির সাগরসম মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো চোখে দেখেননি। এতো মানুষের সমাগম দেখে তার অন্তরজ্বালা বাড়তে থাকে। এইজন্য তিনি তার বাছাই করা আইনশৃংখলা বাহিনীকে দিয়ে গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করান।

আজ বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম ও সহ অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশকে পণ্ড করায় আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কারণেই আইনশৃংখলা বাহিনী আরও বেশী বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। তারা মরণঘাতী অভিযানে আরো বেশী হিংস্র হয়ে উঠেছে। ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচীতে ঢাকাসহ সারা দেশে তারা হত্যার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। গতকালকের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিবেকহীন পুলিশ বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে আরও বেশী উৎসাহী হয়ে উঠে।

রিজভী বলেন, তিন দিন ধরে আওয়ামী পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলেছে সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যা কথা বলেছেন সারা জাতির সামনে। অথচ দেশবাসী এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে সেটাকে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছে যে মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। এইভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের সংস্থারা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল। আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আক্রমণ ও জখম করে হতাহত করছে না খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাক্ষুধা এতটাই তীব্র যে তারা সারা দেশকে গোরস্থান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগের ’টপ টু বটম’ নেতাকর্মীদের ভাষা একগুয়েমি গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের মতো। এদের কাছে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো মূল্য নেই। এরা অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রভু হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সেই কারণেই বিরোধীদলের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করার জন্য নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সাজিয়েছে। আর তারই প্রতিফলন বিএনপিসহ বিরোধীদলের কর্মসূচীতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লাঠিয়ালের মতো তাদের আক্রমণ।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে তিনি ’ডাণ্ডালীগ’ গড়ে তুলেছেন। আইনশৃংখলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ একযোগে ’ডাণ্ডালীগ’ হিসেবে কাজ করছে। এরাই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারণ জনগণ জানতে না পারে। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের এক্সিবিশনে মানুষের পেট ভরছে না। বিপুল জনগোষ্ঠী অনাহারে অর্ধাহারে কোনরকমে বেঁচে আাছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এতটাই বেড়েছে সেটা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়িয়েও আরো উর্দ্ধোগামী হয়েছে। আলুর কেজি ৭০-৮০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। পিঁয়াজের বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। সাতদিন আগে ছিল ১০০ টাকা। আর সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৬৫ টাকা। এইভাবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সারা জাতি হতবম্ভ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপার্জিত পয়সা দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। একবেলা খাবার জোগোনোই অসম্ভব হয়ে গেছে। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার কারণ এই সিন্ডিকেটবাজরা সবাই আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট।

রিজভী বলেন, জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে। বিএনপির যে সমস্ত নেতা যারা একসময় মন্ত্রী -এমপি ছিলেন তাদেরকেও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারে বিএনপি নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভিতরে আটক রাখা হয়। ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছে। সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার এখন বিএনপি নেতাকমীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের উপর সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি নেতাদের হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর কারাকর্তৃপক্ষের নিপীড়ণ ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সারা দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শাখার ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. আশিক মিয়া গতকাল পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত ১০ টায় মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের অন্যতম হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানসহ মহানগর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা বাছুরুল ইসলাম রানা, বনানী থানা ছাত্রদলের লুৎফর হোসেন বাবর, দক্ষিণখান থানা যুবদলের শরীফুল ইসলাম দুলাল ও বাড্ডা থানা ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলামকে গতকাল সকালে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নাটোর, কুমিল্লা জেলা ও মহানগর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর শহর, ঝিনাইদহ, খুলনা, নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল এবং শান্তিপূর্ণ অবরোধকে ঘিরে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫৬৩ জনের বেশি নেতাকর্মী। মোট ৫৫টির বেশি মামলা এবং ৩৪৩৬ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত এবং মৃত্যু ৯ জন (সাংবাদিক ১ জন)। এছাড়াও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৭ দিনে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪২৮৩ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ৮০টির অধিক।

রিজভী আরও জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুলাই হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশে মোট আহত ৫৭২৯ জনের অধিক নেতাকর্মী। মোট ৪৭৩ টি মামলায় আসামি ৩৫,৬২৫ জন। এরইমধ্যে মোট ৬৯৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে ১৭টি মামমলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ১১১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১০

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১১

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১২

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৩

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৪

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৬

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৭

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৮

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৯

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

২০
X