আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হওয়া, পরিবেশ না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ না নেওয়াসহ বিশেষ প্রয়োজনে এককভাবে নির্বাচন অংশ নেওয়ার জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারা।
আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব পরামর্শ তুলে ধরেন তারা। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে দেশের সব জেলা, উপজেলা, মহানগরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
এর বাইরের কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হলে ১২০টি আসন ও ১০ জন মন্ত্রী আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে গত ১৫ বছরে পাওয়া না পাওয়ার ইস্যুতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশিরভাগ নেতা। দিনশেষে সমাপনী বক্তব্যের সময় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া প্রশ্নে নির্বাহী কমিটি দলের চেয়ারম্যানকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেন। তার সিদ্ধান্ত সবাই হাত তুলে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিন সন্ধ্যায় সভাপতির বক্তব্যে জাপা চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয়, সরকার যদি সংলাপ না করে এই পরিস্থিতিতে জাপা নির্বাচনে গেলে আমাদের বিরুদ্ধেও আমেরিকার স্যাংশন আসতে পারে।
আমেরিকার সংলাপের কথা না শুনলে তারা হয়ত ভিসানীতি বাস্তবায়ন করবে একথা উল্লেখ করে জাপাপ্রধান বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যদি মার্কিন সরকারের দেওয়া চিঠির গুরুত্ব বুঝে তারা হয়ত একটা সংলাপের ব্যবস্থা করবে। সংলাপ করলে বিএনপি হয়ত নির্বাচনে আসতে পারে। যদি সেটা হয় তাহলে জাপাও সংলাপে যাবে। সংলাপে সম্মিলিত প্রস্তাবের মাধ্যমে হয়ত ইলেকশন ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন আনা যাবে। এই প্রেক্ষিতে এখন আমরা কী করব, সেটাই ভাবনার বিষয়।
তিন দলকে আমেরিকার চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকার সরকারি ভাষ্য এখন অফিসিয়ালি জানিয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কী কী সমস্যা নিয়ে আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা ভাবছি। আমরা ঘরে বসে নেই। সব জায়গায় যোগাযোগ রক্ষা করছি, কথা বলছি। দলকে একটু স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
নির্বাচনী সিডিউল ইস্যুতে কাল থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত ও ঘোলাটে হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরে জি এম কাদের বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্তে আপনাদের শক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাপা খাদের কিনারে পৌঁছেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, বেহিসেবি সিদ্ধান্ত নিলে আমরাও গভীর খাদে নিমজ্জিত হবো। তাছাড়া জাপার জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পিছলে গেলে দলটির বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে। দীর্ঘদিন হয়ত তাদের মাশুল গুনতে হবে। বিএনপি যদি নির্বাচন বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে না পারে তাদেরও অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আমি একক সিদ্ধান্ত নেব না, দলের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করব।
তিনি বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের ওপর বিতশ্রদ্ধ, সঠিক ভোট না হওয়ার সম্ভাবনা, আওয়ামী লীগ দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার ও নিগৃহীত, বর্তমানে নির্বাচনের পরিবেশ নেই সহ যেসব মতামত দিয়েছেন সবই সঠিক। অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দিয়েছেন, তা বিবেচনা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত জোট নিয়ে না ভেবে ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। ভোটের সঠিক পরিবেশ না থাকলে অংশ নেওয়া অর্থহীন।
তিনি আরও বলেন, ভোটে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে সব দিক আমরা বিবেচনা করছি। দলের জন্য যা ভালো হবে তাই করব।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন