দেশের অর্থনীতি মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের উদ্যোগে ‘বাজেট সংলাপ ২০২৪’ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা একটা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হলে যেমন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, এরপর সিসিইউ, আইসিসিইউতে নেওয়া হয়। ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থা আইসিসিইউ থেকে জেনারেল বেডে আনা সম্ভব নয়। তারপরও সরকার সাহস করে বাজেট দিয়েছে, সত্যিকারের বাজেট দেওয়ার অবস্থা আছে কি?
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে এবং আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. শাহ আলম, প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন, প্রফেসর ড. মান্নান প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, সরকারের যেসব খাত থেকে আয় করার কথা বলছে, সেসব খাত থেকে আয় করতে পারবে না। কারণ একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ সেই তুলনায় আয় করতে পারছে না। ফলে জনগণ ট্যাক্স কোথা থেকে দেবে। রিজার্ভ ও ডলার সংকট চলছে, আমদানিও কমছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমছে। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বলছে, অথচ আজকে ব্যাংকের টাকাই নেই। বাজেটে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনাও নেই।
সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ৮০ কোটি টাকা একসঙ্গে ব্যাংক থেকে উত্তোলন কীভাবে করল? এর সঙ্গে আরও রাঘববোয়ালরা জড়িত। এই অ্যাকাউন্টে কারা টাকা জমা দিল, আয়ের উৎস কি, এর রশিদ কোথায়? দেশে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ হয় ভিন্নমতের ওপর। আর যারা সরকারকে পছন্দ করবে তাদের জন্য কোনো আইনের বালাই নেই।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সরকারের লুট করার একমাত্র পথ হলো বড় বড় প্রকল্প। কালো টাকা সাদা করার যে কৌশল নিয়েছে সরকার এতে এক টাকাও আসবে না।
গয়েশ্বর আরও বলেন, বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার সাহসের মতো এই বাজেট দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজেটে বাস্তবায়ন বা কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই। ভিক্ষুকের মতো টাকা তুলতে হবে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারলেই তো ট্যাক্স দিবে। গত ১৫ বছরের অর্থনীতি যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে একটা বাজেট দিতে হয় তাই সরকার দিয়েছে। সত্যিকারের বাজেট দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। কারণ আগে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হবে। কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, সরকারের উচ্চবিলাসী বাজেট বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কোষাগার শূন্য। পুরো দেশটা একটা শূন্য হাড়ির মতো। সোয়া এক কোটি লাখ টাকার বেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে, আরও এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আগে শুনেছি, রাষ্ট্রের কাজ হলো দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করা। আজকে এর উল্টো দেখছি। যারা চোর-দুর্নীতিবাজ, যারা বেনজীরময় তাদের জন্য পুরো দেশটা। দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলা যায় না। কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে চোর-ডাকাতি-দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে চার এমপি জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাস্তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কোনো সরকার নেই।
মন্তব্য করুন