কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রোজার গুরুত্বপুর্ণ আমল ও কয়েকটি দোয়া 

রোজার গুরুত্বপুর্ণ আমল ও কয়েকটি দোয়া 
রোজার গুরুত্বপুর্ণ আমল ও কয়েকটি দোয়া | ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

রোজা একটি সচেতন প্রয়াস, অভ্যাসবশত করে বসা কোনো আমল নয়। রোজা পালন করতে হয় অনুভূতি সজাগ রেখে, অমনোযোগী বা অচেতনভাবে নয়। একই কথা ধর্মের ক্ষেত্রেও, ধর্ম সর্বাংশে সচেতন অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। সেই ব্যক্তিই প্রকৃত ধার্মিক যিনি সচেতন অনুভূতি সহকারে ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলেন।

রোজাদারকে সুবহে সাদিকের আগে খাবার খেয়ে নিতে হয়, একে আরবিতে বলা হয় ‘সেহরি’।

হাদিসে বলা হয়েছে: তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে (সহি বুখারি, হাদিস নম্বর : ১৯২৩)।

রোজার নিয়ত (সেহরির দোয়া)

রোজার নিয়তকে অনেকে সেহরির দোয়া বলেন। যদিও সেহরির দোয়া বলতে কিছু নেই। রোজার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। মনের ইচ্ছা বা সংকল্পকে নিয়ত বলে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ: ১/১৭৬; রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫)

রমজান মাসে সেহরি খাওয়াকেও অনেকে রোজার নিয়ত বলে গণ্য করেছেন। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)

রোজার প্রচলিত নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

‘নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

সেহরির পর এভাবেও রোজার নিয়ত করা যেতে পারে

بِصَوْمِ غَدٍا نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَان

‘বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান’ অর্থ: ‘আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।’

ইফতারের দোয়া

দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোর মধ্যে ইফতারের সময়ও একটি। অনেকেই গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে ইফতার করে থাকেন। এটি সুন্নাহ পরিপন্থি। আবার ঘরের নারীরা এ সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উচিত, এ সময় দোয়া করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—

তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না-

এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক।

দুই. রোজাদার যতক্ষণ না ইফতার করে

তিন. মজলুমের। (ইবনে মাজা: ১৭৫২)

হজরত মুয়াজ ইবনে জুহরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় এই দোয়া পাঠ করতেন—

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু, অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনারই জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেওয়া জীবিকা দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ: ২৩৫৮)

ইফতারের পরের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (স.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন—

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ: ২৩৫৭)

রমজান মাসের বিশেষ দোয়া

হজরত সালমান (রা.) বলেন, একবার নবী করিম (স.) শাবান মাসের শেষদিন ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজান মাসে ৪টি কাজ খুব বেশি করে করবে। দুটি কাজ দ্বারা তোমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। আর দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই। যে দুটি কাজ দ্বারা তোমরা প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে তা হলো- তোমরা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিতে থাকবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। যে দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই তা হলো- তোমরা জান্নাত প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৭)

উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে ৪টি দোয়া হলো—

১) أشهد أن لا إله إلا الله ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ: আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই।

২) أستغفر الله ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই।

৩) أسألك الجنة ‘আসআলুকাল জান্নাহ’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই।

৪) أعوذ بك من النار ‘আউজু বিকা মিনান নার’ অর্থ: আমি তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।

বি.দ্র: এই দোয়ার বাক্যগুলো মিলিয়ে একত্রেও পড়া যাবে, আবার ইচ্ছে করলে আলাদা আলাদাও পড়া যাবে।

শবেকদরের দোয়া

اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘আমি যদি জানতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর—তখন কোন দোয়া পড়ব?’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেন। (সূত্র: তিরমিজি: ৩৫১৩)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান ২০২৪
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লাল ডিম না সাদা ডিম, কোনটির পুষ্টিগুণ বেশি

ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে দুটি সংবাদমাধ্যম, ট্রাম্পের ক্ষোভ

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন / বাঙ্কার বাস্টারেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র

ইরানে ফের হামলার চেষ্টা, ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত

রাজশাহী মহানগরীর থানা-ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠনে সতর্ক চিঠি

ভুল রক্ত পুশ করায় মৃত্যুর মুখে রোগী, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

একযোগে ৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

খামেনির বিপদ কাটেনি, সামাল দিতে হবে নিজ জাতির ক্ষোভ

ইরানে যুদ্ধের অবসান : তেহরানের বর্তমান পরিস্থিতি

১০

মাঝ নদীতে ভাসছিল ৪০ যাত্রীসহ ট্রলার, এরপর যা ঘটল

১১

বিএনপিতে দখলবাজ নেতাকর্মীর স্থান নেই : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

১২

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম

১৩

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১৪

২৫ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৫

ফরিদপুরে বিএনপির কর্মী সম্মেলন স্থগিত

১৬

১৫ বছর পর দেশে এসে মর্মান্তিক খবর পেলেন নুরুদ্দিনের বাবা

১৭

বুধবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৮

২৫ জুন : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৯

যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি ইরানের

২০
X