নির্দিষ্ট কয়েকটি বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে নামাজের দিকে আহ্বান করাই হলো আজান। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য মুয়াজ্জিন এ আহ্বান করে থাকেন। এটি ইসলামি জীবন পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । নামাজের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি আজানেরও গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্য যিনি আজান দেন, ইসলাম তাকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে সমাসীন করেছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের গোনাহ ওই পর্যন্ত মাফ করে দেওয়া হয়, যে পর্যন্ত তার আজানের আওয়াজ পৌঁছায় (অর্থাৎ যদি এত দূর পর্যন্ত জায়গা গোনাহ দ্বারা পূর্ণ হয়, তবু তার সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে)। এ ছাড়া প্রতিটি প্রাণী ও নিষ্প্রাণ বস্তু, যারা মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাবে, সবাই তার জন্য সাক্ষ্য দেবে।’ (আবু দাউদ : ৫১৫)
অন্য হাদিসে হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জানিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর ফেরেশতারা প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীদের ওপর রহমত নাজিল করেন। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি যত বেশি হয়, সে অনুযায়ী তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যেসব প্রাণী এবং নিষ্প্রাণ বস্তু তার আওয়াজ শুনতে পায়, সবাই তার সত্যতার সাক্ষ্য দেয়। মুয়াজ্জিন সেসব নামাজির সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করেন, যারা তার সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করে।’ (নাসায়ি : ২৫৪)
আজান দেওয়ার বিধান হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা (ওয়াজিবের কাছাকাছি)। আর উত্তর দেওয়া সুন্নত। আজানের উত্তর দেওয়ার পদ্ধতি হলো, মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। (মুসলিম : ৩৮৫)
তবে কোনো কোনো বর্ণনায় ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময়ও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (তাবারানি : ৪৫৮)
এদিকে, আজানের জবাব দিয়ে মুয়াজ্জিনের সমপর্যায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের ওপর ফজিলত প্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা কীভাবে তাদের সমান সওয়াব পাব?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘মুয়াজ্জিনরা যে রূপ বলে তুমিও তদ্রূপ বলবে। অতঃপর যখন আজান শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রূপ সওয়াব প্রাপ্ত হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫২৪)
তবে, বেশকিছু সময় ও অবস্থায় আজানের জবাব দেওয়া উচিত নয়। আবার অনেক সময় আজানের উত্তর দেওয়া জায়েজও নয়। কালবেলার পাঠকদের জন্য এই সময় এবং অবস্থাগুলো জানাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী কৌড়িয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মাওলানা হেলাল আসহাব কাসেমি—
যেসব অবস্থায় আজানের জবাব দেওয়া জায়েজ নয়
১. আজানের সময় নামাজ পড়ছেন এমন ব্যক্তি।
২. খুতবার সময়, চাই জুমার খুতবা হোক বা বিবাহের খুতবা।
৩. স্ত্রী সহবাসের সময়।
৪. পেশাব-পায়খানা করার সময়।
যেসব অবস্থায় আজানের জবাব না দেওয়ার অবকাশ আছে
১. ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন বা শরিয়তের মাসআল-মাসায়েল শেখা কিংবা শিক্ষা দেওয়ার সময় আজানের জবাব না দেওয়ারও অবকাশ আছে, তবে সুযোগ করে জবাব দেওয়া বা সবার পক্ষ থেকে একজনে দিয়ে দেওয়াই উত্তম।
২. কোরআন তেলাওয়াতের সময় আজান হলে জবাব না দেওয়ার অবকাশ আছে, তবে তেলাওয়াত বন্ধ করে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। (ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া, ২য় খণ্ড)
৩. খাবার খাওয়ার সময় আজানের জবাব না দেওয়ার অবকাশ আছে, তবে খাবার বন্ধ করে জবাব দেওয়াটাই উত্তম। ( আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৯৭)
মন্তব্য করুন