বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে বিস্ফোরক কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, হাথুরুকে সরানোর পেছনে মূল যে ঘটনা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল জাতীয় দলের স্পিনার নাসুম আহমেদের সঙ্গে তার বিতর্কিত আচরণ।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ জানায় বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্তে বিসিবির গঠিত ওই কমিটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচক ও পরিচালকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে হাথুরুসিংহের সঙ্গে নাসুমের চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ চলাকালীন ঘটে যাওয়া 'হাঁটুর ওপর হাত' ও 'কলার চেপে ধরা' সংক্রান্ত ঘটনা বারবার উঠে আসে।
ঘটনার বিবরণ:
নাসুমের ভাষ্যমতে, তিনি মাঠে একটি অনুরোধ বাস্তবায়নে দেরি করায় হাথুরু অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে কলার ধরে ঝাঁকান এবং গলায় আঘাত করেন। এই অপমানজনক ঘটনার পর তিনি নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে বিষয়টি জানান। তবে হাথুরু নিজে পরে তদন্ত কমিটির কাছে জানান, এমন কোনো ঘটনার কথা তিনি মনে করতে পারছেন না। দলের স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ নিকোলাস লি ছিলেন একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি হাথুরুর ‘ঘাড়ে হাত তোলার’ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গোপন তথ্য ফাঁস ও কোচ অপসারণের ষড়যন্ত্র:
বিশ্বকাপ চলাকালে দলীয় একতা, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি ও কোচিং স্টাফদের মধ্যকার বিভাজনের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেখানে সবচেয়ে বিস্ফোরক বক্তব্যটি এসেছে বিশ্বকাপ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান (জালাল ইউনুস) ও তামিম ইকবাল নাসুমকে ফোন করে ওই ঘটনার কথা মিডিয়ায় ফাঁস করে হাথুরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তৈরি করেন, যেন তাকে বরখাস্ত করা যায়।’
সাকিব আরও উল্লেখ করেন, বিশ্বকাপের আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে অস্থিরতা, মিডিয়ার নেতিবাচক ভূমিকা ও দলীয় শৃঙ্খলার অভাব পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দল যখন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারে, তখন থেকেই মনোবল ভেঙে পড়ে। এছাড়া খেলোয়াড়দের মধ্যে হাথুরুর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও কোচিং প্যানেলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না।
প্রতিবেদনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:
প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করেছে, কোচ হাথুরুসিংহের পেশাদারিত্ব নিয়ে সরাসরি অভিযোগ না থাকলেও, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিতর্কিত ঘটনার সূত্র ধরেই তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে নাসুম ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় ও গণমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে—তা যে কোচের চাকরিতে বড় প্রভাব ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
বিশ্বকাপের পর হাথুরু দেশে না ফিরে নিজেই জানান, ‘জীবনের নিরাপত্তা’ নিয়ে শঙ্কা থেকে তিনি বাংলাদেশ ছাড়েন। বিসিবির রিপোর্টে তার সেই বক্তব্য স্পষ্টতই গুরুত্ব পেয়েছে।
মন্তব্য করুন