নাজমুল হোসেন শান্ত—যিনি এক সময় তিন ফরম্যাটেই ছিলেন বাংলাদেশের নেতা, আজ আর কোনো সংস্করণেই নেই নেতৃত্বের ভূমিকায়। কলম্বো টেস্ট শেষে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি শেষ করলেন নিজের অধিনায়কত্ব অধ্যায়। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই সময়ে বাংলাদেশ দল কেমন করেছে তার নেতৃত্বে?
টেস্ট ক্রিকেটের কথা বলা যাক প্রথমে। সবমিলিয়ে ১৪টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল। এর মধ্যে ৪টি জয়, ৯টি হার আর একটি ড্র। জয়গুলোর মধ্যে অন্যতম স্মরণীয় ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে ২-০ তে সিরিজ জয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ও এসেছে তার হাত ধরেই। এছাড়া চলতি বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি জয়ও রয়েছে তার অর্জনের খাতায়।
এই ১৪ জন টেস্ট অধিনায়কের মধ্যে ন্যূনতম ১০ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া সাত অধিনায়কের মধ্যে নাজমুলের জয় হারই সবচেয়ে বেশি—২৮.৫৭ শতাংশ। যা স্পষ্ট করে দেয়, মাঠের পারফরম্যান্সে তিনি কম যাননি।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিনায়ক হিসেবে তার ব্যাটিং গড় ৩৬.২৪, যেখানে পুরো ক্যারিয়ারে গড় ৩২.১৯। ৭টি সেঞ্চুরির মধ্যে তিনটিই এসেছে নেতৃত্বের সময়ে। অধিনায়ক হিসেবে মোট ৯০৬ রান করেছেন তিনি। গল টেস্টেই দুটি সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দায়িত্বের ভারও তাকে থামাতে পারেনি।
ওয়ানডে ফরম্যাটে ১৩ ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে জয় পেয়েছেন নাজমুল। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক থেকে ছিলেন উজ্জ্বল। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে তার গড় ৫১.২৭, যা বেশ চোখ ধাঁধানো। রান করেছেন ৫৬৪।
টি-টোয়েন্টিতে ২৪ ম্যাচের মধ্যে জিতেছেন ১০টি। যদিও এই ফরম্যাটে তার ব্যাটিং ফর্ম ছিল অনিয়মিত। অধিনায়ক হিসেবে ২২ ইনিংসে মাত্র একটিমাত্র ফিফটি, গড় ১৮.৭৬, মোট রান ৩৯৪।
সবশেষে বলা যায়, নেতৃত্বে নাজমুলের মেয়াদ হয়তো বেশি দীর্ঘ হয়নি, কিন্তু তিনি যে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেটি রেকর্ডেই থেকে যাবে। তার অধীনে পাওয়া ঐতিহাসিক কিছু জয় এবং ব্যাট হাতে লড়াই অনেক সমর্থকের মনেও জায়গা করে নিয়েছে।
শান্তর পরিসংখ্যান বলছে, হয়তো আরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলে সাফল্যের পাল্লা ভারী হতো আরও। কিন্তু মাঠের বাইরের সিদ্ধান্তগুলোই এবার থামিয়ে দিয়েছে এই তরুণ নেতাকে। এখন দেখার পালা, নতুন অধ্যায়ে কীভাবে ফেরেন তিনি, কিংবা তাঁর অভিজ্ঞতা দলকে কতটা সাহায্য করে।
মন্তব্য করুন