‘অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, অনবদ্য, অবিস্মরণীয়’—আর কী বলা যেতে পারে! নেদারল্যান্ডসের এমন দুর্দান্ত জয়কে বিশ্লেষণ করার মতো শব্দ আর কী বা হতে পারে! বিশ্বকাপের উড়ন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে যেন মাটিতে টেনে নামাল তারা। টুর্নামেন্টের ১৫তম ম্যাচে এসে দ্বিতীয় অঘটন দেখল বিশ্ব।
প্রায় বছর খানেক আগে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্তম্ভিত করে ম্যাচ জিতেছিল ডাচরা। এবার ফরম্যাটটা ভিন্ন।কিন্তু ফলাফলটা একই। ১২ বছর পরওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে ধর্মশালায় রূপকথা লিখল ডাচরা।
মঙ্গলবার ধর্মশালার হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে বৃষ্টি বাধায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৩ ওভারে। যেখানে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান তুলে নেদারল্যান্ডস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন স্কট এডওয়ার্ডস। জবাবে খেলতে নেমে ৪২ ওভার ৫ বলে ২০৭ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে ৩৮ রানের জয় পায় ডাচরা।
জয়ের পর ডাচদের খুব একটা উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি। যেন স্বাভাবিক একটা জয়ই পেয়েছে তারা। তবে তাদের ডাগ আউটে যখন আনন্দ উল্লাস, তখন অপর পাশে থাকা প্রোটিয়া ডাগ আউটে সুনসান নিস্তব্ধতা। কয়েক মিনিটের জন্য হয়তো সব কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের।
টস জেতা বাভুমার জন্য সুযোগ ছিল আগে ব্যাটিং করার। কিন্তু বৃষ্টিতে যখন উভয় দলের ৭ ওভার করে কাটা গেল, তখন আগে ফিল্ডিং না নেওয়াই হতো বোকামি। বোলাদের সাহায্যে ম্যাচও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। ১৪০ রানেই ডাচদের ৭ ব্যাটারকে ফেরান তারা। কিন্তু এরপর যেন সব ধার হারান লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদারা। ডাচ অধিনায়ক এডওয়ার্ডসের অপরাজিতা ৭৮ রানের ইনিংসের সঙ্গে যোগ হয় ফন ডার মারউয়ের ২৯ রানের দারুণ ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪৩ ওভার শেষে ৮ উইকেট ২৪৫ রানে থামে নেদারল্যান্ডস। শেষ দিকে ৯ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন আরিয়ান দত্ত। এ ছাড়া ১৯ বলে ২৯ রান করেন রোয়েলফ ভ্যান ডের মেরওয়ে। ২৫ বলে ২০ রান করেন তেজা নিদামানুরু।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন লুঙ্গি এনগিদি, কাগিসো রাবাদা ও মার্কো জানসেন। তাছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন জেরাল্ড কোয়েটজে ও কেশব মাহারাজ।
২৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দেখে-শুনে করেছিলেন টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কক। আগের দুই ম্যাচে টানা সেঞ্চুরি করা ডিক কক আজ দ্রুতই ফিরেছেন। অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিলেন এই ওপেনার। তবে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। ২২ বলে করেছেন ২০ রান।
ডি কক ফেরার পর বাভুমাও টিকতে পারেননি। ফন ডার মারউইয়ের লেন্থ ডেলিভারিতে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে প্রোটিয়া অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ১৬ রান।
এরপর এইডেন মার্করাম-রাসি ফন ডার ডুসেনরাও সুবিধা করতে পারেননি। দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ফিরেছেন এই দুই ইনফর্ম ব্যাটার। তাতে দলীয় অর্ধশতক পূরণের আগেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
দলকে এমন অবস্থা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার ও হেনরিখ ক্লাসেন। তবে ২৮ রান করে ক্লাসেন ফিরলে ভাঙে ৪৫ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। এরপর মিলারকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি মার্কো জানসেন। এই অলরাউন্ডার ৯ রান করে ফিরেছেন।
বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনেও এক প্রান্তে সাবলীল ছিলেন মিলার। তবে ৩১তম ওভারে এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাচরা। ফল ভেকের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৫২ বলে ৪৩ রান। এরপর জেরাল্ড কোয়েটজে চেষ্টা করেছেন। তবে তার ২২ রানের ইনিংস কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে।
মন্তব্য করুন