যেখানে প্রত্যাশা ছিল ট্রফির বৃষ্টি, সেখানে হতাশা আর ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছে। পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটির ২০২৪-২৫ মৌসুমটা রূপ নিয়েছে এক গৌরবহীন, গ্লানিতে ভরা অধ্যায়ে—যেটি ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম ব্যর্থ অধ্যায় হিসেবে ধরা পড়বে নিঃসন্দেহে।
সিটির ঘরে এসেছে একমাত্র কমিউনিটি শিল্ড, গত আগস্টে। এরপর? কেবল হতাশার মিছিল। কারাবাও কাপে চতুর্থ রাউন্ডেই বিদায় টটেনহ্যামের কাছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রাউন্ড অফ ৩২-এ রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায়, এবং সবশেষে এফএ কাপ ফাইনালে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ১-০ গোলে হার— অনেকদিন পর ট্রফিহীন মৌসুম গেল দলটির সঙ্গে।
শুরুর ১০ ম্যাচে ৮ জয় ও ২ ড্র, মৌসুমটা একসময় মনে হচ্ছিল সিটির পকেটেই। কিন্তু এরপর থেকে শুরু হয় পতনের ঢাল। পরবর্তী ১৩ ম্যাচে জয় মাত্র একটিতে, বাকি ১২ ম্যাচে ৯ হার! এই সময় তারা হজম করেছে ২৮ গোল—প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.১টি করে।
লিগ টেবিলে তারা এসে পড়ে ষষ্ঠ স্থানে, লিভারপুলের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে ১৪ পয়েন্টে। ফলাফল? ব্যাকফুটে চলে যান গার্দিওলা, এবং শীতকালীন দলবদলে ওমর মারমুশ, নিকো গঞ্জালেস ও আবদুকোদির খুসানভ-এর মতো তিন খেলোয়াড়কে আনতে ক্লাব খরচ করে ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো।
তবুও মোটেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি আসেনি। রিয়ালের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ৬-৩ ব্যবধানে ছিটকে পড়া, আর্সেনালের কাছে ৫-১ ও লিভারপুলের কাছে ২-০ হার, সব মিলিয়ে মৌসুমে বিষাদের রঙই ছিল বেশি।
এমনকি আর্জেন্টিনার ‘লিটল ডেভিল’ এচেভেরির অভিষেকেও কোনো রূপকথার জন্ম হয়নি। দুইটি পরিষ্কার সুযোগ মিস করেন এই উঠতি তারকা, এবং ফাইনালের পর কেঁদে ফেলেন মাঠেই।
তবে শেষ মুহূর্তে হাল না ছেড়ে, দলটি কিছুটা লড়াকু মনোভাব দেখায়। লিগের শেষ দুই ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পাওয়ার লড়াই চলছে। সিটির সংগ্রহ ৬৫ পয়েন্ট, এক ম্যাচ কম খেলে তালিকায় ষষ্ঠ, পঞ্চম স্থানে থাকা নিউক্যাসল, ভিলা ও চেলসির চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে।
তাদের বাকি দুটি ম্যাচ:
২০ মে বনাম বোর্নমাউথ
২৫ মে বনাম ফুলহ্যাম
উল্লেখযোগ্যভাবে, সিটি খেলবে ২০২৫ ক্লাব বিশ্বকাপে—গ্রুপ জি-তে যেখানে প্রতিপক্ষ আল আইন, জুভেন্টাস ও উইদাদ কাসাব্লাঙ্কা। প্রথম ম্যাচ ১৮ জুন, মরক্কোর দল উইদাদের বিপক্ষে।
এক সময়কার ‘অপ্রতিরোধ্য’ সিটির মৌসুম শেষ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ পারফরম্যান্স, ব্যর্থ রণকৌশল আর পেছনের দরজা দিয়ে ইউরোপে টিকে থাকার লড়াইয়ে। পেপ গার্দিওলার সামনে এখন সবচেয়ে কঠিন কাজ: নিজের দল, দর্শন ও নেতৃত্বকে নতুন করে গড়ে তোলা—আবার গৌরব ফেরাতে।
মন্তব্য করুন