বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও, বাস্তবতা এটাই—ইন্টার মায়ামি বনাম প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) লড়াই ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে দুই ভিন্ন মেরুর দলের লড়াই। আর এই ম্যাচেই ঘটতে যাচ্ছে এক ঐতিহাসিক পুনর্মিলন—লিওনেল মেসি বনাম তার পুরোনো ক্লাব পিএসজি।
অপেক্ষা, আবেগ আর প্রতিশোধের ইঙ্গিতে ভরপুর এই ম্যাচে মায়ামির আকাশ জ্বলবে রোমাঞ্চে। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে দুটি ভিন্ন গল্পের দল—একদিকে ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন, অন্যদিকে মেসির নেতৃত্বে এগিয়ে চলা এক আমেরিকান স্বপ্নযাত্রা।
পুরোনো ক্লাবের মুখোমুখি মেসি, প্রথমবারের মতো
বার্সেলোনা ছেড়ে অশ্রুসিক্ত বিদায়, তারপর প্যারিসে দুই মৌসুম। কিন্তু মেসির হৃদয়ে জায়গা হয়নি পিএসজির। সৌদি আরব সফরের জন্য নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বকাপ জয় করেও ক্লাব থেকে কোনো স্বীকৃতি না পাওয়া, সমর্থকদের বিদ্রুপ—সব মিলিয়ে এক বিষাদঘেরা অধ্যায়।
মেসির ভাষায়, ‘আমি ছিলাম একমাত্র খেলোয়াড়, যাকে বিশ্বকাপ জয়ের পর ক্লাব কোনোভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।’
এবার তার সামনে সেই ক্লাব, যারা একসময় ছিল তার ‘চুক্তির আশ্রয়’, এখন প্রতিপক্ষ। আর সেই ম্যাচে তিনি খেলতে নামবেন একজন পুরোনো গুরু—লুইস এনরিকের বিপক্ষে।
‘রাগী মেসি আমাদের জন্য আশীর্বাদ’ — মাশ্চেরানো
ইন্টার মায়ামির কোচ এবং মেসির সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো জানেন, এই ম্যাচে আবেগ কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু তার চাই রাগী, খিদে মেটাতে চাওয়া সেই মেসিকে।
মেসি যখন রাগে, তখন সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এই ম্যাচ তার মনের ভিতর যতটা জায়গা নিচ্ছে, ততটাই আগুন দেখা যাবে মাঠে।
বার্সেলোনা রিইউনিয়ন বনাম ইউরোপের সেরা
মেসির সঙ্গে মাঠে থাকবেন তার প্রিয় সঙ্গীরা—সুয়ারেজ, জর্দি আলবা, বুসকেটস। আর বিপরীতে থাকবেন কভিচা কভারাতসখেলিয়া, ওসমান দেম্বেলে, এবং লুইস এনরিকের রণকৌশল।
ইন্টার মায়ামির তরুণ তারকা বেনজামিন ক্রেমাসচি ও নোয়া অ্যালেন এই প্রথম ইউরোপীয় বড় দলের বিপক্ষে খেলবেন। তরুণ-প্রবীণের মিশ্রণে তৈরি এই দলে আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট।
আলবার ভাষায়—"কেন নয়?"
‘পিএসজি হয়তো আমাদের চেয়ে ভালো দল। কিন্তু এটাই তো ফুটবলের সৌন্দর্য—নিচু র্যাংকের দলও চমক দেখাতে পারে। আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই। কেন নয়?’
ডেভিড বনাম গোলিয়াথ—কিন্তু ইতিহাস বলছে, অসম্ভব কিছুই নয়
ইন্টার মায়ামির সামনে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে পোর্তো, আল আহলি ও পালমেইরাসের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে রাউন্ড অফ ১৬-তে পৌঁছেছে তারা। কিন্তু পিএসজি? সেটা একেবারে ভিন্ন স্তরের লড়াই।
মাশ্চেরানোর কণ্ঠে শেষ আশার কথা, ‘ফুটবল সবসময় শক্তির খেলা নয়। এখানে দুর্বল দলও লড়াই করতে পারে। আর আমরা তা করব।’
এই ম্যাচ শুধু একটি ক্লাবের জন্য নয়, মেসির ব্যক্তিগত ইতিহাস, বার্সেলোনা-পিএসজির গল্প, এবং একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা—সবকিছুর মিশেল। রোববার রাতে হয়তো মেসির বুটে লেখা হবে এক নতুন প্রতিশোধ-গাঁথা।
মায়ামির স্বপ্ন বনাম প্যারিসের বাস্তবতা—রয়েছে শুধু ৯০ মিনিটের ব্যবধান।
মন্তব্য করুন