সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল, ফলাফল তখন ড্রয়ের দিকেই। মনে হচ্ছিল জিরোনার বিপক্ষে আর কিছুই করার নেই বার্সেলোনার। কিন্তু ৯৩তম মিনিটে রোনাল্ড আরাউহোর এক হেড যেন পুরো কাতালোনিয়ার বুকে নতুন প্রাণ ঢেলে দিল। ইনজুরির কারণে লেভানডভস্কি, রাফিনিয়া ও ফেরান তোরেসকে ছাড়া মাঠে নেমেও ২-১ গোলের রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নিল হান্সি ফ্লিকের দল।
এমন এক জয়ে, যা একই সঙ্গে চিন্তার মেঘ ঢেকে দিল ঠিক রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে এল ক্লাসিকোর আগমুহূর্তে।
ম্যাচের শুরুতেই এক ভিন্ন রূপ। ‘মায়ামি ম্যাচ’ নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিরোধের প্রতিবাদে প্রথম ১৫ সেকেন্ড খেলা স্থির রেখে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের অবস্থান জানায় দুই দলই। এরপরই শুরু হয় বার্সেলোনার একচেটিয়া আক্রমণ। লামিন ইয়ামালের দারুণ পাস থেকে ১২তম মিনিটে পেদ্রির গোল — একেবারে নিপুণ কারিগরির উদাহরণ।
তবে খেলার ধারাই বদলে যায় দ্রুতই। কর্নার থেকে আসা বলটি অ্যাক্সেল উইটসেলের দারুণ বাইসাইকেল কিকে জালে জড়িয়ে জিরোনা সমতা ফেরায়। সেখান থেকেই ম্যাচ রূপ নেয় উন্মুক্ত লড়াইয়ে—ভানাত ও পোর্তু মিস করেন দু’টি সোনালি সুযোগ, অন্যদিকে দে ইয়ং ও রাশফোর্ডের শট পোস্টে বা গাজ্জানিগার হাতে আটকে যায়।
ফ্লিকের বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এখন তরুণদের ওপর আস্থা। রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ১৭ বছর বয়সী ড্রো ফার্নান্দেজকে সুযোগ দিয়েছিলেন, এবার জিরোনার বিপক্ষে একই বয়সী টনি ফার্নান্দেজ পেলেন প্রথম একাদশে জায়গা। যদিও বিরতির পর তাকেও বদলে নামানো হয় ফারমিনকে।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই উত্তেজনা। ব্রায়ান গিলের শট ব্লক করেন কুন্দে, আর বার্সার পক্ষে ফারমিন, ইয়ামাল ও রাশফোর্ড বারবার চেষ্টা চালান। এমনকি কুবারসি গোল করেও খুশি হতে পারেননি—এরিক গার্সিয়ার ফাউলে বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।
শেষ ৩০ মিনিটে ক্লান্তি ও চাপ বেড়ে যায় বার্সেলোনার ওপর। পেদ্রি ও ইয়ামালকে তুলে নেওয়ায় মাঝমাঠে ছন্দ হারায় দলটি। ফ্লিক ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়তি সময় নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লাল কার্ড দেখেন, কোচ ছাড়াই শেষ মুহূর্তে লড়তে হয় বার্সাকে।
কিন্তু ভাগ্য তখনও তাদের পক্ষে ছিল। ৯৩তম মিনিটে দে ইয়ংয়ের দৌড় থেকে আসা ক্রসে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করেন আরাউহো, যেন জন্মগত স্ট্রাইকার। গাজ্জানিগাকে পরাস্ত করে জালে পাঠানো সেই বল কেবল জয় নয়, পুরো সপ্তাহের চাপও হালকা করে দেয় ন্যু ক্যাম্পের জন্য।
শেষ মুহূর্তের এই জয় বার্সেলোনাকে আপাতত বাঁচিয়ে রাখল সমালোচনার ঝড় থেকে। তবে হান্সি ফ্লিক জানেন, বার্নাব্যুর আগমুহূর্তে এই জয়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে বহু প্রশ্ন—রক্ষণভাগের ভঙ্গুরতা, গোলের অভাব, আর কোচের অস্থিরতা।
তবু এক রাতের জন্য, সব প্রশ্নে পূর্ণবিরতি টানলেন রোনাল্ড আরাউহো—যার শেষ মুহূর্তের নৈপুণ্যে বার্সেলোনা আবারও ফিরল স্বস্তির নিশ্বাসে।
মন্তব্য করুন