মৃত মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায় এমন একটি টেলিফোনের খোঁজ পাওয়া গেছে। শহর থেকে দূরে একটি গহিন বনের মধ্যে রয়েছে ফোনটি। নেই কোনো সংযোগ, তবুও সেই টেলিফোনে কথা বলার জন্য ছুটে আসছেন অনেকেই। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের অলিম্পিয়া এলাকায়।
ঘটনার শুরু হয় জাপানের ওটসুচি শহর থেকে। ২০১০ সালে ওই শহরের বাগান নকশাকার ইতারু সাসাকি প্রথম সংযোগবিহীন টেলিফোন বুথ তৈরি করেন। তার ধারণা, না বলা কথা বাতাসে ভেসে পৌঁছে যাবে মারা যাওয়া প্রিয়জনের কাছে। সেই ধারণা থেকেই এর নামকরণ দেওয়া হয় ‘উইন্ড ফোন’।
এর ঠিক পরের বছর ২০১১ সালে জাপানের তোহোকু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা যায়। এরপর থেকে এই টেলিফোনটি জনপ্রিয়তা পায়। কারণ, তখন হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই ফোনে কথা বলার জন্য ভিড় করত। এ ঘটনা নিয়ে একাধিক উপন্যাস ও চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে।
জাপানের এ ধারণা থেকে ২০২০ সালে কোরে ডেমবেক নামে এক ব্যক্তি অলিম্পিয়ার স্কুয়াক্সিন পার্কে উইন্ড ফোনটি স্থাপন করেন। কারণ, তার এক বন্ধুর মেয়ে চার বছর বয়সে হঠাৎ মারা যান। মেয়ের মৃত্যুর শোকে তার বন্ধু পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তাকে সান্ত্বনা দিতেই একটা পুরোনো ফোন কিনে এনে পার্কের গাছের সঙ্গে বেঁধে দেন তিনি। তার বন্ধুকে বলেন, ‘এই ফোনে তুমি তোমার মেয়েকে না বলা কথাগুলো বলতে পার। হয়তো মন কিছুটা শান্ত হবে।’
ওই মেয়েটির নাম ছিল জোয়েল রোজ সিলভেস্টার। তার স্মরণেই পরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুয়াক্সিন পার্কে একটি ফোন বুথ বসানো হয়। ওই বুথের সামনে একটি ফলকে লেখা আছে ‘যারা কখনো না কখনো কোনো প্রিয়জন হারিয়েছেন, এই ফোন তাদের জন্য। এর মাধ্যমে আপনার হারানো বন্ধু বা স্বজনকে না বলা বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারেন। বলতে পারেন বিদায়, যা হয়তো কখনো বলার সুযোগ পাননি।’
জোয়েলের মা এরিন সিলভাস্টার বলেন, ‘ফোনের ওপাশ থেকে তো আর মেয়ের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। তাই একা একা কথা বলতে গেলে আমার বুক ভেঙে যায়। তবু যখন কোনোভাবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারি না, তখন এই ফোন বুথে আসি।’
জোয়েলের সঙ্গে কথা বলতে তার ভাই জেডেন, জোনাহ ও বোন জয়ও আসে। জোয়েলকে তারা কতটুকু ভালোবাসেন ও কতটা মিস করেন সেসব কথাই টেলিফোনে বলেন।
এভাবেই দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ভিড় করেন এই ফোনের কাছে। এমনকি ডেমবেকের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অনেকেই এমন ফোন বুথ স্থাপন করছেন।
সূত্র : রয়টার্স
মন্তব্য করুন