কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পরোক্ষ ধূমপানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের

নারী মৈত্রীর প্রধান কার্যালয়ে সংগঠনটির নেত্রীরা। ছবি : কালবেলা
নারী মৈত্রীর প্রধান কার্যালয়ে সংগঠনটির নেত্রীরা। ছবি : কালবেলা

তামাক প্রাণঘাতি দ্রব্য। তামাকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয় প্রভাবেই প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর পৃথিবীজুড়ে ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু তামাক গ্রহণের কারণে। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকীর এক প্রবন্ধে উঠে এসেছে পরোক্ষ ধূমপানে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে শিশু রক্ষায় সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে নারী মৈত্রীর নেত্রীরা। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নারী মৈত্রীর প্রধান কার্যালয়ে '২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নারীর কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ'করণ শীর্ষক প্রশিক্ষণ শেষে এ দাবি জানান তারা। ২০ নেত্রীর সমন্বয়ে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুস সালাম মিয়া। প্রশিক্ষণে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে নারী নেত্রীদের সামনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাসরিন আকতার।

তিনি জানান, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং কর্মক্ষেত্র, পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন লাখো মানুষ।

বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ।

তামাকের মহামারি সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাস হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সুপারিশগুলো কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের আলোকে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত হবে।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

শিশুর পাশাপাশি নারী স্বাস্থ্যের জন্যও তামাক অত্যন্ত ক্ষতিকর। শাহীন আকতার ডলি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। যেখানে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর তামাকের কারণে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন ৪৪২ জন মানুষ। এই অকাল মৃত্যু রোধ করতে এবং পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে নারী-শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করা অত্যন্ত জরুরি। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয় মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জন্য আমাদের সবার দাবির কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ হতে হবে। আবদুস সালাম মিয়া বলেন, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বিশেষ করে জন্ম থেকেই সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোর ভাষা থেকে শুরু করে আচার-ব্যবহারই তারা অনুকরণ করে। শিশুরা যা দেখে তাই শিখে বড় হয়। তাই বাবা, বড় ভাই, চাচা, মামা কিংবা অন্য কেউ ধূমপান করলে সে শিশুটিও ধূমপানে আকৃষ্ট হয়। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার।

এছাড়াও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের তাগিদ জানান নারী নেত্রীরা। পাশাপাশি তামাকবিরোধী সব কাজে নারী মৈত্রীর পাশে সর্বদা থাকার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানের কমান্ডার কানি গুপ্তচর কি না, জানাল মোসাদ

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

চাল না কিনলে জাপানে নতুন করে শুল্কের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

হলি আর্টিসান হামলার আজ ৯ বছর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

কারাগারে যেমন কাটছে মমতাজের

পাকিস্তানে একযোগে হামলা চালাতে চায় ভারত-ইসরায়েল

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল জমিয়ত

মহররমে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি : যা করণীয়

যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

১০

সরকারি চাকরিতে বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা

১১

দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে আজ 

১২

০১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে

১৪

মঙ্গলবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৫

১ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে তালা দিলেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

১৭

চাকসু ভবনকে ‘ভাতের হোটেল’ ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

১৮

৭ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না এসএসসি ফলপ্রার্থী রিয়ামনির

১৯

আট মামলার আসামিকে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

২০
X