বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার খানায় জরিপের চালিয়েছে। যেখানে দেশের ৬০ শতাংশের বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ে হওয়ার চর্চা রয়েছে বলে উঠে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে, গত ৫ বছরে এসব পরিবারের যেসব মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বিয়ের সময় বয়স ১৮ এর কম ছিল।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই গবেষণার ফলাফলে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইনোভেশন ও মাইগ্রেশন অ্যাডভোকেসির ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএম মোর্শেদ।
গবেষণা পত্র উপস্থাপনকালে বলা হয়, বাল্যবিবাহের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার খানায় এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপের তথ্য বলছে, এসকল জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর, সেখানে বাল্যবিবাহের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোণায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
গবেষণায় উঠে আসে, পিরোজপুরের (৭২ দশমিক ৬ শতাংশ) পর বাল্যবিয়ের শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), নওগাঁ (৬৫ শতাংশ), ঠাকুরগাঁও (৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জয়পুরহাট (৬১ দশমিক ৪ শতাংশ)।
৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাশ করার আগেই বিয়ে হয়েছে। যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ দরিদ্র্য, যৌতুক না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ।
নন-প্রবাবিলিটি পারপাসিভ স্যাম্পলিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। আধা-কাঠামোগত (সেমি, স্ট্রাকচার্ড) সাক্ষাতকারের মাধ্যমে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তাদের ধার সংগ্রহ করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী, জাতিসংঘ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
জানা যায়, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার অংশ হিসেবে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের নিয়ে গ্রামভিত্তিক স্বপ্নসারথি দল গঠন করেছে ব্র্যাক।
মন্তব্য করুন