

সুদানের খার্তুম থেকে দারফুর-শুধু ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর লাশের স্তূপ! কয়েক মাস আগেও যে খার্তুম ছিল সুদানের প্রাণ, আজ সেখানে গৃহযুদ্ধের আগুন। উত্তর দারফুরের এল-ফাশের শহরের আকাশ ছেয়ে আছে কালো ধোঁয়ায়, আর রাস্তাগুলো পরিণত হয়েছে নিস্তব্ধ কবরস্থানে। রাস্তায় পড়ে আছে শত শত লাশ, দাফন করারও কেউ নেই।
জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে। সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এই ভয়াবহতার পেছনে শুধু সুদান নয়, একটি মুসলিম-প্রধান দেশের নামও বারবার উঠে আসছে সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু কেন?
মূলত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের সরকার উৎখাত হয়েছিল। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন দুই ক্ষমতাধর জেনারেল, জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, যিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি তার ডেপুটি ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর নেতা।
এই দুই জেনারেলের মধ্যে মূল সংঘাত শুরু হয় প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা এবং নতুন এই যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে। ধারণা করা হয়, ক্ষমতার ভাগ, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী আরএসএফের ব্যাপক মোতায়েনকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছিল।
ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল শুরু হয় গোলাগুলি, যা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। আরএসএফ গঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালে। যে কুখ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দারফুরে নৃশংস গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্য থেকে আরএসএফ বাহিনী গড়ে ওঠে।
জেনারেল দাগালো এই আরএসএফ-কে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই বাহিনীর মাধ্যমে তিনি সুদানের কিছু সোনার খনি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সেই সোনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেন। এবং সুদানের সেনাবাহিনী সরাসরি অভিযোগ করেছে যে আমিরাত আরএসএফ-কে সমর্থন ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যদিও উপসাগরীয় দেশটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বর্তমানে আরএসএফ প্রায় পুরো দারফুর এবং পাশের কর্দোফান প্রদেশের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠনের চেষ্টা করছে।
মন্তব্য করুন