মধ্যপ্রাচ্যে বড় ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কাউকেই না চটিয়ে সুকৌশলে সবার মন রক্ষা করে চলছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গেল ৩১ জুলাই ইরানে গিয়ে আততায়ী হামলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এরপর থেকেই বড় ঝড়ের আশঙ্কায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো দেশ। কিন্তু তারপরও আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন পুতিন।
হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার সম্পর্ক খুব গভীর। এখন দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর মতো পরিস্থিতির তৈরি হলেও, খুব সতর্কভাবে পা ফেলছে রাশিয়া। আবার গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর মস্কোর কড়া সমালোচনার শিকার হয় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি গাজা যুদ্ধ এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করে রাশিয়া।
শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিনপন্থি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন পুতিন। তাই যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকা দেশগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেকে তথাকথিত ‘গ্লোবাল সাউথের’ অংশ হিসেবে দেখাতে চায় মস্কো। আর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো আগ্রহ নেই পুতিনের।
এর আগেও এই অঞ্চলে পাওয়ারব্রোকারের ভূমিকায় দেখা গেছে রাশিয়াকে। ফিলিস্তিনের দুই সংগঠন হামাস ও ফাতাহর নেতাদের মস্কো ডেকে নিয়ে গিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন পুতিন। আবার ইরান ছাড়াও সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিয়েছে মস্কো। মূলত ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পর থেকেই এই অঞ্চলে মস্কোর প্রভাব বাড়তে থাকে।
ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার মাখামাখি নতুন কিছু নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ লাগতে পারে এমন সম্ভাবনার মধ্যেই তেহরানকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা অস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়া। ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন এই তালিকায় রাডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। এই অঞ্চলে নিজের নিজের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদারকে একা ছেড়ে দিতে চায় না রাশিয়া। আবার ইরান-ইসরায়েল বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক, তাতেও রাশিয়ার আপত্তি রয়েছে।
ইরানের দুটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া চায় ইরান খুব সীমিত পরিসরে ইসরায়েলে হামলা চালাক, যাতে প্রাণহানি কম হয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, বন্ধুত্ব বাঁচাতে হামলার সবুজ সংকেত দিলেও বড় ধরনের সংঘাত চায় না রাশিয়া। যদিও এ নিয়ে ইরানের ভেতর কিছু ক্ষোভ রয়েছে। তবে রাশিয়ার বিশ্বাস, আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হলে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এক রাখতে পারবে না ইরান।
মন্তব্য করুন