

তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে নাগরিকের জাপানে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে চীন। নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সম্ভাব্য চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়ে। এর মধ্যে এমন সতর্কতা জারি করেছে চীন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ নভেম্বর জাপানি পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাকাইচি বলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ঘটনা ঘটলে টোকিও সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। চীন এই মন্তব্যকে ‘উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং শুক্রবার জাপানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। পরে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে টোকিওও চীনের ওসাকা কনসুল জেনারেলের একটি ‘অশোভন’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের জেরে বেইজিংয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। পরে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এদিকে শুক্রবার রাতে জাপানে অবস্থিত চীনা দূতাবাস তাদের সরকারি প্ল্যাটফর্ম উইচ্যাটে একটি বার্তায় নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ এড়ানোর আহ্বান জানায়। সেখানে বলা হয়, জাপানি নেতাদের সাম্প্রতিক উত্তেজক মন্তব্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে জাপানে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
জাপানের প্রধান মন্ত্রিসচিব মিনোরু কিহারা শনিবার বলেন, বেইজিংয়ের এই সতর্কতা দুই দেশের মধ্যে ‘কৌশলগত ও পারস্পরিক সম্পর্ক’ গঠনের লক্ষ্যকে ব্যাহত করে। জাপান ইতোমধ্যে চীনকে ‘উপযুক্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, চীনের প্রধান তিনটি এয়ারলাইন্স— এয়ার চায়না, চায়না সাউদার্ন ও চায়না ইস্টার্ন জাপানগামী টিকিটের সম্পূর্ণ রিফান্ডের ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, শনিবার থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত যাত্রায় যাত্রীদের বিনামূল্যে রিফান্ড বা রুট পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে চীন এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুমকিও দিয়ে থাকে। যদিও জাপান ও চীন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার, তবে ঐতিহাসিক অনাস্থা, সীমান্ত বিরোধ এবং সামরিক ব্যয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়।
তাইওয়ান প্রেসিডেন্টের দপ্তরের মুখপাত্র ক্যারেন কুও বলেন, জাপান ভ্রমণে চীনের নিষেধাজ্ঞা এবং সাম্প্রতিক লাইভ-ফায়ার মহড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। তিনি বলেন, জাপানের বিরুদ্ধে চীনের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হুমকি’ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।
চীনের মেরিটাইম সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, সোম থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত পীত সাগরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সার্বক্ষণিক লাইভ-ফায়ার মহড়া চলবে এবং ওই এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
মন্তব্য করুন