প্রায় শত বছর ধরে ‘শান্তিকামী’ সংবিধান মেনে চলে আসছে এক সময়ের পরাক্রমশালী ঔপনিবেশিক শক্তি জাপান। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে এমন সংবিধান প্রণয়ন করেছিল দূর প্রাচ্যের দেশটি। তবে বর্তমানে চীন ও উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে ধীরে ধীরে সেই ‘শান্তিকামী’ নীতি থেকে সরে আসছে টোকিও। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ইতালির সঙ্গে উন্নতমানের যুদ্ধবিমান তৈরি করে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে জাপানি মন্ত্রিসভা।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশে অস্ত্র রপ্তানির বিধি শিথিল করেছে জাপান। তাই এখন থেকে প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে এমন দেশ এবং যেসব দেশে কোনো যুদ্ধ চলমান নেই সেখানে যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে পারবে তারা। এ ছাড়া চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা বলে ২০২৭ সালের মধ্যে সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ৩১১ বিলিয়ন মার্কিন খরচ করবে জাপান। এই পরিমাণ অর্থ বিশ্বের চার নম্বর ধনী দেশটির মোট জিডিপির দুই শতাংশ। এ ছাড়া এই অর্থ আগের পাঁচ বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত জাপান একটি সংবিধান প্রণয়ন করে যেখানে আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যুদ্ধ ও শক্তির ব্যবহার নিষেধ করা হয়। এমনকি ওই সংবিধানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানে সামরিক বাহিনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাদের সক্ষমতা শুধু আত্মরক্ষার মধ্যে সীমিত রাখা হয়। এতে অস্ত্র রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল। যদিও ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমলে এই বিধিনিষেধ প্রথমবারের মতো শিথিল করা হয়।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে নতুন যুদ্ধবিমান তৈরি করতে যুক্তরাজ্য ও ইতালির সঙ্গে একটি চুক্তি করে জাপান। চুক্তি অনুযায়ী, টেমপেস্ট নামে নতুন যুদ্ধবিমান তৈরি করা হবে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত সেন্সর থাকবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এসব যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রথমবারের মতো অন্য কোনো দেশের সাথে যৌথভাবে কোনো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করবে জাপান।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ভবিষ্যতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশীদার হিসেবে টোকিওর বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে তৃতীয় দেশে যুদ্ধবিমান রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, জাপান তাদের সেই যুদ্ধবিরোধী ও শান্তিকামী দেশের ইমেজ পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অবশ্য জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিনোরু কিহারা বলছেন, জাপান এখনো শান্তিকামী দর্শনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদেশে অস্ত্র রপ্তানির বিষয়টি কঠোর নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্তব্য করুন