বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসির সফরসঙ্গী

১৯ মে, (রোববার) হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ছবি : সংগৃহীত
১৯ মে, (রোববার) হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ছবি : সংগৃহীত

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সফরসঙ্গী ছিলেন প্রেসিডেন্টের দপ্তরপ্রধান গোলাম হোসাইন ইসমাইলি। প্রেসিডেন্ট রাইসির ওই প্রাদেশিক সফর এবং তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমরা ১৯ মে, (রোববার) সকাল ৬টায় তেহরান থেকে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হই।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান বলেন, সকাল ৭:১০ মিনিটে আমরা তাব্রিজে অবতরণ করি। পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের যৌথ কর্মসূচি ছিল বাঁধ উদ্বোধন করা। সেই কাজ সেরে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটি কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জোহরের নামাজ আদায় করি আমরা। এ সময় গ্রামের বেশ কিছু মানুষ ওই নামাজখানাতেই তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে আসে।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রাইসির সর্বশেষ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানটি ঠিকঠাকমতোই শেষ হয়। এরপর আমরা সম্পূর্ণ পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই হেলিকপ্টারে চড়ে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাই। আকাশ একেবারেই পরিষ্কার ছিল।

আধা ঘণ্টার মতো আমরা এভাবেই যাচ্ছিলাম। এরপর এক খণ্ড মেঘের মতো কিছু একটা দেখা গেল।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান বলেন, হেলিকপ্টারগুলো মেঘের স্তরের উচ্চতায় কিংবা মেঘের স্তর থেকে কিছুটা কম উচ্চতায় উড়ছিল। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাফাভি ছিলেন আমাদের এই হেলিকপ্টার বহরের কমান্ডার। তিনি ওই মেঘ দেখে ঘোষণা করলেন, আরও উচ্চতায় উড়ে গিয়ে মেঘের উপরে যেতে এবং সেই উচ্চতায় হেলিকপ্টার চালিয়ে যেতে।

ইসমাইলি বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী মেঘের উপরে চলে গেল হেলিকপ্টারগুলো। আমরা ছিলাম ৩ নম্বর হেলিকপ্টারে। মাঝখানের হেলিকপ্টারে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি আর সামনে ছিল অপর হেলিকপ্টারটি।

তিনি জানান, আমরা মেঘের উপরে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর ক্যাপ্টেন বুঝতে পারল যে মূল হেলিকপ্টারটি আমাদের সঙ্গে নেই এবং ওই হেলিকপ্টারটিকে দেখা যাচ্ছে না।

ইসমাইলি আরও বলেন, হেলিকপ্টারটি না আসায় আমাদের পাইলট পেছনে ফিরে গেল। আমি কো-পাইলটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, সম্ভবত ওই হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করেছে। আমরা যতই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কোনোভাবেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাই কোনো সাড়া মেলেনি।

তিনি বলেন, আমাদের পাইলট ওই এলাকায় কয়েক রাউন্ড করে উড়ে উড়ে দেখার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে মেঘের ওপরেও চলে যায়। কিন্তু সেখান থেকে নিচে আমরা কিছুই দেখতে পাইনি এবং মেঘের নিচে আসাটাও সম্ভব হচ্ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে আমরা পার্শ্ববর্তী সুনগুন তামা খনি এলাকায় অবতরণ করলাম এবং ঘটনার খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম।

ইসমাইলি বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের কাছে মোবাইল ফোন ছিল। তাদের কল করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান আরও বলেন, ফ্লাইট ক্রু আমাদের বলেছিল, পাইলট মুস্তাফাভির সেলফোনে একবার যোগাযোগ হয়েছিল। তবে জবাব দিয়েছিলেন শহীদ আয়াতুল্লাহ আলি হাশেম। তিনি বলেছিলেন, আমি ভালো নেই এবং আমি উপত্যকায় পড়ে গেছি, এ ছাড়া বিশেষ কোনো কিছু বলেননি তিনি। আমি ফোন করে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, বুঝতে পারছি না কী হয়েছে! বলতেও পারছি না আমি কোথায় আছি। তিনি আরও বললেন, আমি গাছগাছালির মধ্যে আছি। জিজ্ঞেস করলাম : কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, না, কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, আমি একা, আমার চারপাশে কেউ নেই। আমি বললাম : ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যটা কীরকম দেখছেন? তিনি আমাদের গাছগাছালি ও বনের অস্তিত্বের কথা জানালেন। তার কথা থেকে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ইসমাইলি আরও বলেন, যখন আমরা এলাকাটি খুঁজে পাই, পরিস্থিতি দেখেই ধারণা করেছিলাম প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য সফরসঙ্গী দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ হয়েছেন। তবে আলে-হাশেম কয়েক ঘণ্টা পরে শহীদ হয়েছেন।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান আরও বলেন, আমরা যখন ওপর থেকে দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ, আগুন কিংবা ধোঁয়ার কোনো আলামত দেখতে পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, ঘণ্টাখানেক পর আমরা যখন সুনগুন তামার খনিতে নামি তখন আবহাওয়া অনুকূল ছিল। কিন্তু যখনই দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যাই তখন মেঘ তৈরি হয়, বৃষ্টি শুরু হয় এবং কুয়াশা নেমে আসে। বিকেল ৩টার পর থেকে এলাকার আবহাওয়া সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

১০

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১১

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১২

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১৩

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৪

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৫

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৬

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৭

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৮

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৯

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

২০
X