টানা তাপপ্রবাহের সঙ্গে একের পর এক দাবানলে নাকাল হয়ে পড়েছে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলো। দাবানলের আগুনে গ্রিস, ইতালি ও আলজেরিয়ায় ৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আগুন থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
দাবানলে শুধু উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১০ সেনা সদস্য।
আলজেরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের ১৬ প্রদেশে প্রচণ্ড বাতাস ও তীব্র গরমে ৯৭টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। এসব আগুনে সাধারণ মানুষ ছাড়াও সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। ওই সেনা সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, দাবানলের ঘটনায় বেজাইয়া, বুইরা ও জিজেল প্রদেশ থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১৬ প্রদেশে দাবানলের ঘটনায় আলজেরিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় এই তিন প্রদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ফায়ার সার্ভিসকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তাদের সহায়তায় হেলিকপ্টার এবং ৩৫০টি ট্রাক নিয়োজিত করা হয়েছে।
এদিকে ভূমধ্যসাগরীয় আরেক দেশ গ্রিস দাবানলে বিপর্যস্ত। টানা কয়েক সপ্তাহজুড়ে দাবানলের আগুনে পুড়ছে দেশটি। আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন স্থানীয়রা। আগুন নেভাতে গিয়ে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলট নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইভিয়ার দুর্গম এলাকায় দাবানলে পুড়ে স্টক ব্রিডার নামে ৪১ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন : আলজেরিয়ায় দাবানলে নিহত ৩৪, ঘরছাড়া শত শত মানুষ
গত কয়েক দিন ধরে গ্রিসে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এ সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে ৭৯টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। এসব দাবানলের ঘটনায় হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে আগুন নেভাতে এখনো হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।
মঙ্গলবার গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহ আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আমরা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমরা যা হারিয়েছি তা আমরা আবার নির্মাণ করব। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাব। জলবায়ু সংকট এসে পড়েছে।’
ইতালিতে দাবানলের পাশাপাশি ঝড়, টর্নেডো ও শিলাবৃষ্টিও দেখা দিয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, দাবানলের সময় ঘর থেকে বের হতে না পেরে ৭০ বছর বয়সী এক দম্পতি এবং ৮৮ বছর বয়সী এক নারী দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এ ছাড়া ইতালির কালাব্রিয়ায় অগ্নিদ্গ্ধ হয়ে ৯৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। তাকে বাঁচাতে গেলে তার মেয়ে ও জামাতাও আহত হয়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রিস, ইতালি, স্পেন, পর্তুগালসহ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ইউরোপে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়ছে এসব দেশ। তীব্র এ তাপপ্রবাহের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন