সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাল্টে গেছে অনেক হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা বিবেচনা করা হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। সম্প্রতি দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তাদের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডারদের বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে বাংলাদেশেও এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে কেন বাংলাদেশের ওপর নজর রাখতে বলছেন মন্ত্রী রাজনাথ সিং?’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
ভারতের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রাজনাথ সিং সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। প্রতিবেশী দেশটির গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না বাংলাদেশের কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গেল বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাজনাথ সিং তার বক্তব্যে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে বলতে গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও হামাস-ইসরায়েল প্রসঙ্গ টেনেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখতে বলেছেন। এ নিয়েই আপত্তি বাংলাদেশের কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান বলেন, ওই সভায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীসহ তিন বাহিনীর প্রধান, সিনিয়র কমান্ডার ও প্রতিরক্ষা সচিব উপস্থিত ছিলেন। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে এ ধরনের উক্তিকে স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্যিক থেকে শুরু করে সম্পর্কও বেড়েছে বহুগুণ। তবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধিতা বাড়ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। বিশেষত, গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটি আরও প্রবল হতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছে বিবিসি বাংলা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের অনেকেই মনে করেন গত ৩টি মেয়াদে বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। আর প্রতিবারই তা পেরেছে ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের কারণে।
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিজিবি সদস্যদের বলেছেন, সীমান্তে পিঠ দেখাবেন না। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিজিবির মূল দায়িত্ব সীমান্ত সুরক্ষা করা।
মন্তব্য করুন