বাংলাদেশের কিশোরী দুই বোনকে এক ব্যক্তি অপহরণ করে ভারতের যৌনপল্লির দালালের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই দুই বোনের একজনের বয়স ১৭, অপরজনের ১৫ বছর।
পরে ভারতের পুনেতে তাদের অবস্থান শনাক্তের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ ঘণ্টার বিরামহীন এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে দুই বোনকে উদ্ধার করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পুনে সিটি পুলিশের পরিদর্শক ভানুপ্রতাপ বার্জ। পরে ওই কিশোরীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, রকি নামের এক যুবক দুই বোনের একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাকে মিথ্যা আশ্বাসে ভুলিয়ে ২০১৩ সালের ১৪ মে তার বোনসহ অপহরণ করা হয়। পরে বেআইনিভাবে ওই দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন রকি।
এ ঘটনার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে উঠে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে মেয়েদের খুঁজে বের করতে অনুরোধ করেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল, অপহরণের পর মেয়েদের মুম্বাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুনের এক যৌনকর্মীর সঙ্গে অপহৃত এক বোনের কথা হয়। ওই নারীর মায়া হলে তিনি বাংলাদেশের এ অসহায় মেয়েকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই যৌনকর্মী বিষয়টি কলকাতায় তার পরিবারকে জানান। তারা বাংলাদেশে অপহৃতদের চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পতিতালয়ের পানির ট্যাংকে পাওয়া গেল একজনকে
পুনে পুলিশ মেয়েদের উদ্ধারে তাদের সোর্সদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করে। এদিকে পরিদর্শক বার্জের নেতৃত্বে বুধওয়ার পেঠ ও শুক্রাওয়ার পেঠ এলাকার পতিতালয়ে অভিযান চলতে থাকে।
বার্জ জানান, সুস্পষ্ট তথ্য ছাড়া অভিযানে পুলিশ যখন দিশেহারা তখন মুমতাজ নামের এক সোর্স জানায়, কয়েকদিন আগে এক পতিতালয়ে অটোরিকশায় করে এনে এক মেয়েকে রেখে যাওয়া হয়।
এর সূত্র ধরে পুলিশ অটোরিকশাচালককে শনাক্ত করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে পতিতালয়ের ছাদে খালি পানির ট্যাংক থেকে ভুক্তভোগী এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় যৌনপল্লির দালাল সুনীল বিচরে ও তানিয়া ব্যাপারীকে।
পুলিশ জানায়, পতিতালয়ের কুখ্যাত এজেন্ট রকি পুনের যৌনদালাল মুক্তি ও তানিয়ার কাছে মেয়েদের ৫০ হাজার ও ৭০ হাজার রুপিতে বিক্রি করে দেন।
পরে তানিয়া মেয়েদের একজনকে বুধওয়ার পেঠের একটি পতিতালয়ে এবং অপরজনকে আরেক যৌন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন।
কুুকুরকে মাংস দিয়ে ভুলিয়ে অপর বোনকে উদ্ধার
প্রাথমিক তথ্যরে ভিত্তিতে পুলিশ বিলাস কাসলেকে গ্রেপ্তার করে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উন্দ্রি এলাকার একটি বাংলোতে অভিযান চালানো হয়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলো পাহারা দিতে কয়েকটি কুকুর রাখা হয়েছিল। আমাদের দেখে যদি কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করত তবে হয়তো অভিযানে সফল হওয়া কঠিন হয়ে যেত। তাই কুকুরগুলোকে বিভ্রান্ত করতে আমরা সাবধানে মাংসের টুকরো ছুড়ে দিলাম। কুকুরগুলো মাংস খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমরা ভেতরে থাকা লোকদের সতর্ক না করে ঘরে ঢুকে গেলাম। সেখান থেকে দ্বিতীয় মেয়েটিকে উদ্ধার করি।’
উদ্ধারের পর যখন দুই বোন প্রথমবারের মতো একে অপরকে দেখল, তারা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
পুলিশ কর্মকর্তা বার্জ বলেন, ‘বিরামহীন ২৪ ঘণ্টার গুরুত্বপূর্ণ অভিযান সফল হলো। এর সঙ্গে দুটি দেশের সরকার জড়িত ছিল।’
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া বার্জ সহকারী কমিশনার হিসেবে অবসরে যান। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে ভারতের প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন