ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষব্যবস্থা সরবরাহ, এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের উন্নয়ন এবং জরুরি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
গত বৃহস্পতিবার চীনের কিংডাও শহরে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভ এই বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে অত্যাধুনিক এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বাকি দুটি স্কোয়াড্রন ভারতকে সরবরাহ করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া।
এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বহু প্রতীক্ষিত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও রাশিয়ার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলুসভের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে রাজনাথ সিং জানান, ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে তারা গঠনমূলক আলোচনা করেছেন।
গত ৭ মে পাকিস্তানে চালানো ভারতের সামরিক অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। নয়াদিল্লি দাবি করে, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। ওই অভিযানের সময় পাকিস্তানের পাল্টা হামলা প্রতিহত করে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোকে সুরক্ষা দিতে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫৪৩ কোটি ডলারে পাঁচটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চুক্তি করে। এর মধ্যে তিনটি স্কোয়াড্রন ইতোমধ্যেই ভারতের হাতে পৌঁছেছে, বাকি দুটি সরবরাহ সম্পন্ন হবে ২০২৬ সালের মধ্যে। বর্তমানে ভারতের সামরিক অস্ত্রভান্ডারের প্রায় ৬০ শতাংশই রাশিয়ার তৈরি।
এ ছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে থাকা ২৫৯টি এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের মধ্যে ৮৪টি আধুনিকীকরণে রাশিয়া ভারতকে সহায়তা করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভ বৈঠকে বলেন, সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হচ্ছে।
এস-৪০০ সিস্টেম কি?
এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ভারতে ‘সুদর্শন চক্র’ নামে পরিচিত একটি উন্নত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লায় যুদ্ধবিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনসহ বিভিন্ন আকাশীয় হুমকি ধ্বংস করতে সক্ষম। প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ১২৮টি ক্ষেপণাস্ত্রসহ দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি থাকে। এটি ১২০, ২০০, ২৫০ এবং ৩৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এসবের পাশাপাশি, সিস্টেমটিতে রয়েছে উন্নত দূরপাল্লার রাডার ও সর্বত্র চলাচলক্ষম ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টর যানবাহন। এতে এমন রাডার, অল-টেরেইন ট্রান্সপোর্ট যানবাহন এবং লঞ্চার থাকে যা দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত, ট্র্যাক ও ধ্বংস করতে সক্ষম।
২০১৮ সালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পাঁচটি স্কোয়াড্রনের জন্য চুক্তি হয়। এই স্কোয়াড্রনগুলোর সরবরাহ ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে ভারত পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে, বিশেষ করে চিন ও পাকিস্তান ফ্রন্টে, তিনটি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে।
মন্তব্য করুন