গুলি করে গাজার ত্রাণকেন্দ্রের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনারা। এ তথ্য জানিয়েছেন ইসরায়েলের হ্যারেটজ পত্রিকার সাংবাদিক নীর হাসন।
শুক্রবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আলজাজিরা।
আলজাজিরাতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নীর হাসন বলেন, এটা মূলত এক ধরনের কৌশল, যেখানে আগুন ব্যবহার করে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ধরুন, যদি কাউকে কোনো জায়গা থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে চান, তাহলে তার দিকেই গুলি চালানো হয়- যদিও আপনি জানেন সে নিরস্ত্র। মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরাতে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশ ঠিক কোন ইসরায়েলি কর্মকর্তা দিয়েছেন, তা জানা না গেলেও নীর হাসনের ধারণা, তিনি সেনাবাহিনীর কোনো উচ্চপদস্থ কমান্ডার হতে পারেন।
নীর হাসন বলেন, এই কৌশল ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ইসরায়েলি নাগরিক এবং সেনাসদস্য এখনো গাজায় চলমান যুদ্ধকে ন্যায্য মনে করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিশ্বাসে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে আরও বেশি মানুষ প্রশ্ন তুলছেন- এই যুদ্ধ কি সত্যিই প্রয়োজনীয়? একই সঙ্গে তারা ভাবছেন, গাজার সাধারণ মানুষ এই যুদ্ধের জন্য কত বড় মানবিক মূল্য দিচ্ছে?
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের মূলধারার সংবাদমাধ্যম সাধারণত যুদ্ধের চিত্র উপস্থাপন করে সেনাবাহিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে গাজায় চলমান যুদ্ধের মানবিক দিকগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে বা সেভাবে তুলে ধরা হয় না।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি ত্রাণ সংস্থাকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। তবে এই সংস্থাটি ঘিরে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রশ্নচিহ্ন। গাজায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজন অজস্র, কিন্তু কেন এই সংস্থার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত বড় সহযোগিতা?
উল্লেখ্য, জিএইচএফ নিজেকে একটি মানবিক সংস্থা হিসেবে দাবি করলেও, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে এটি ইসরায়েলি সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, এটি প্রকৃত অর্থে মানবিক নয়, বরং গাজায় ইসরায়েলের রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষার একটি ‘সফট পাওয়ার টুল’ হিসেবে কাজ করে।
এই সংস্থা সাধারণত প্রচারণার মাধ্যমে ইসরায়েলকে গাজার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে এমন ভ্রান্ত ধারণা ছড়ায়। অথচ বাস্তবতা হলো গাজা বর্তমানে অবরুদ্ধ, বিধ্বস্ত এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকটে। সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রধান বাধা ইসরায়েলই।
ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংগঠনগুলো জিএইচএফকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না। তাদের মতে, এই সংস্থা প্রকৃত নিরপেক্ষ ত্রাণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এবং গোপনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারিতে সহায়তা করে। ত্রাণ বিতরণে তারা রাজনৈতিক আনুগত্য নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেয়, যা মানবিক নীতির পরিপন্থি।
মন্তব্য করুন