ভারত সম্প্রতি অগ্নি-৫ নামের একটি শক্তিশালী মধ্য-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। বুধবার এটি উৎক্ষেপণ করা হয় ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা প্রদেশ থেকে। ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সব ধরনের প্রযুক্তিগত এবং কার্যকরী প্যারামিটার’ যাচাই করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লি জানিয়েছে, অগ্নি-৫ পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এবং এটি ভারতের নিজস্ব তৈরি উন্নত কয়েকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম। ক্ষেপণাস্ত্রটির রেঞ্জ ৫,০০০ কিলোমিটার, যা ভারতের মিডিয়ার প্রতিবেদনে ‘তুরস্ক থেকে চীন পর্যন্ত’ লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকার এটি রুটিন পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল লক্ষ্য চীন ও পাকিস্তান। এমনকি পাকিস্তানের ঘনিষ্ট তুরস্ককেও হয়তো হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত, বিশেষ করে ২০২০ সালের মারাত্মক সংঘর্ষের পর থেকে সম্পর্ক জটিলতায় ঘেরা। ভারত কোয়াড (QUAD) নিরাপত্তা জোটের অংশ, যা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে মিলিত হয়ে চীনের প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম অগ্নি-৫। সংস্কৃত শব্দ অগ্নি অর্থ ‘আগুন’। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১৭.৫ মিটার, ওজন ৫০ হাজার কেজি এবং এটি এক হাজার কেজির বেশি পারমাণবিক বা প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার বেগে এটি ৫,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অন্যতম করে তোলে।
এর এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান তাদের নতুন সেনা রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দেয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতীয় অগ্নি-৫ পরীক্ষার বার্তা মূলত পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং প্রতিবেশী চীনের দিকে বেশি লক্ষ্যভিত্তিক।
অগ্নি-৫ এর পাল্লায় পুরো এশিয়া, চীনের উত্তরাঞ্চল এবং ইউরোপের কিছু অংশও আসে। এটি ২০১২ সালের পর থেকে এর ১০ম পরীক্ষা, এবং গত বছরের মার্চের পর প্রথম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষার সময়ও তাৎপর্যপূর্ণ—পরীক্ষা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার ঠিক আগে সম্পন্ন করা হয়েছে।
চার বছর ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার পর এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত বহন করে। তবে মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ, ভারত-চীন বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এবং অন্যান্য আঞ্চলিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত এখনও চীনকেই প্রধান হুমকি মনে করে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মাঝারি ও দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি মূলত চীনের দিকে লক্ষ্যভিত্তিক।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার সামরিক শক্তি, আঞ্চলিক প্রভাব এবং বৈশ্বিক কূটনীতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য রাখছে।
সূত্র: ইন্ডিয়া ডট কম ও ডেইলি সাবাহ
মন্তব্য করুন