আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরমাণু জ্বালানি চক্র পরিচালনার অধিকার রয়েছে—এ কথা পুনর্ব্যক্ত করে একটি ‘বড় ঘোষণা’ দিয়েছে ইরান। ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নির্ধারিত চতুর্থ দফার পরোক্ষ আলোচনা হঠাৎ স্থগিত হওয়ার পরই দেশটি এই অবস্থান জানায়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইরানের পূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি চক্র পরিচালনার অধিকার রয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন না করেও অনেক এনপিটি স্বাক্ষরকারী দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে থাকে। ইরানও এই অধিকার থেকে বঞ্চিত নয়। এ অধিকার সবার।
আরাঘচির এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সব ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আরাঘচি বলেন, সর্বোচ্চ দাবি আর উত্তেজক বক্তব্য কেবল সাফল্যের সম্ভাবনাই ক্ষুণ্ন করে।
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, বিশ্বে যারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তারাই মূলত পারমাণবিক অস্ত্রধারী। তবে বাস্তবে জার্মানি, জাপান ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি রয়েছে, অথচ তাদের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। এদিকে শনিবার ওমানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ দফার পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়। ওমান জানিয়েছে, ‘লজিস্টিক কারণে’ আলোচনার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এক ইরানি কর্মকর্তা বলেন, আলোচনার সময়সূচি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তেল বিক্রি ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থনের অভিযোগ। এর জবাবে ইরান বলেছে, ওয়াশিংটন ‘বিরোধপূর্ণ বার্তা’ পাঠাচ্ছে, যা কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
ইরানের পরমাণু সক্ষমতা নিয়ে ইউরোপের মধ্যেও উদ্বেগ রয়েছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো সম্প্রতি মন্তব্য করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। তবে তেহরান এই দাবি ‘একেবারে অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং তা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সরাসরি নজরদারির আওতায় রয়েছে।
এদিকে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি গত সপ্তাহে জানান, যদি নতুন কোনো সমঝোতা হয়, তবে ইরানে উৎপাদিত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হয় গলিয়ে ফেলা হবে, না হয় রপ্তানি করতে হবে।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ‘যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা’ (জেসিপিওএ) ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার শর্তে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে সরে গেলে তা কার্যত ভেঙে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা, পারস্পরিক অভিযোগ ও আলোচনা স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে পুরোনো চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
মন্তব্য করুন