সাধারণত বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের নামের পাশে অনেক আগেই যোগ হয় ট্রফির গৌরব। কিন্তু হ্যারি কেইনের নামটা যেন ছিল এক ব্যতিক্রম। ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলদাতা, ইংল্যান্ড অধিনায়ক—সবকিছুই ছিল, কেবল ছিল না কোনো বড় ট্রফি।
অবশেষে সেই খরা কাটল ২০২৫ সালে এসে। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্দেসলিগা জিতে পেলেন বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রথম শিরোপা। ক্যারিয়ারের ১৫তম বছরে এসে প্রথমবার কোনো বড় ট্রফি ছুঁলেন কেইন।
এই উপলক্ষে ফুটবল বিশ্বে শুরু হয়েছে তুলনা—মেসি, রোনালদো, সালাহ, এমবাপ্পে বা ভিনিসিয়ুসদের মতো আধুনিক তারকারা কীভাবে, কত বছর অপেক্ষায় ছিলেন তাদের প্রথম বড় ট্রফির জন্য?
কেইনের অপেক্ষা: ১৫ বছরের দীর্ঘ পথচলা
২০১০ সালে টটেনহ্যামের হয়ে অভিষেক, তারপর সময় গড়িয়েছে—কিন্তু ট্রফি আসেনি। ২০১৫ লিগ কাপ, ২০১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল কিংবা ইউরো ২০২০—সব জায়গায় শেষ হাসি ছিল না। অবশেষে ২০২৩ সালে বায়ার্নে যোগ দেন আর ২০২৫ সালে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফি জয় করেন।
লিওনেল মেসি: অভিষেকের ১ বছরের মধ্যেই লা লিগা জয়
ফুটবল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি ২০০৪ সালে বার্সেলোনায় অভিষেকের পরের মৌসুম ২০০৫-০৬ জিতে নেন লা লিগা। এরপর তো ইতিহাস! ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে তার সবচেয়ে বেশি শিরোপা। প্রথম ৩ বছরে তার অর্জন ছিল: ২টি লা লিগা, ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ১টি সুপার কাপ।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো: অভিষেকের পরের বছরই এফএ কাপ
আরেক ফুটবল আইকন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২০০৩ সালে ম্যানইউ-তে যোগ দিয়ে ২০০৪ সালেই এফএ কাপ জিতে নেন। এরপর পর্তুগাল, রিয়াল, জুভেন্টাস—সব ক্লাবেই ট্রফির ঝুলি পূর্ণ করেছেন।
নেইমার: শুরুতেই পেয়েছেন ট্রফির স্বাদ
নেইমার ব্রাজিলে থাকাকালীন সান্তোসের হয়ে ২০১১ সালে কোপা লিবার্তাদোরেস জিতে নিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সেই।
মোহাম্মদ সালাহ: প্রথম বড় ট্রফি ৯ বছরে
২০১০ সালে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু, ২০১৮-১৯ মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে কাটেন ট্রফির খরা। এরপর প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, এফএ কাপ—সবই এসেছে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে: মাত্র ২ বছরের মধ্যেই লিগ ওয়ান, ৩ বছরে বিশ্বকাপ
২০১৫-১৬ মৌসুমে মোনাকোর হয়ে শুরু, ২০১৭ সালে প্রথম লিগ ওয়ান জয়। আর ২০১৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ হাতে তোলেন।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র: দুই বছরেই লিগ শিরোপা
২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, প্রথম ২-৩ বছর ছিলেন বেঞ্চে। এরমধ্যে ২০২৯-২০ মৌসুমে জিতেন লা লিগা। ২০২২ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে গোল করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেন। সময় লেগেছে ৪ বছর।
ব্রুনো ফার্নান্দেজ: ১১ বছর পর প্রথম বড় ক্লাব ট্রফি
২০১২ সালে ক্যারিয়ার শুরু, কিন্তু প্রথম ক্লাব ট্রফি পান ২০২৩ সালে ম্যানইউর হয়ে লিগ কাপ জিতে। যদিও জাতীয় দলের হয়ে ২০১৯-এ নেশনস লিগ জিতেছেন।
লামিন ইয়ামাল: ১৬ বছর বয়সেই ইউরো জয়!
২০২৩ সালে বার্সায় অভিষেক, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সুপার কাপে গোল করেন আর প্রথম ট্রফি আসে ইউরোতে স্পেনের হয়ে।
সময়ের হিসাব: কে কত দ্রুত পেয়েছেন সাফল্য?
খেলোয়াড় | অভিষেক বছর | প্রথম বড় ট্রফি | অপেক্ষার সময় |
---|---|---|---|
হ্যারি কেইন | ২০১১ | ২০২৫ (বুন্দেসলিগা) | ১৫ বছর |
লিওনেল মেসি | ২০০৪ | ২০০৫ (লা লিগা) | ১ বছর |
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো | ২০০২ | ২০০৪ (এফএ কাপ) | ২ বছর |
মোহাম্মদ সালাহ | ২০১٠ | ২০১৯ (উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) | ৯ বছর |
কেভিন ডে ব্রুইন | ২০০৮ | ২০১৫ (ডিএফবি-পোকাল) | ৭ বছর |
ভার্জিল ভ্যান ডাইক | ২০১১ | ২০১৯ (উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) | ৮ বছর |
কিলিয়ান এমবাপ্পে | ২০১৫ | ২০১৭ (লিগ ১) | ২ বছর |
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র | ২০১৮ | ২০২০ (লা লিগা) | ২ বছর |
ব্রুনো ফার্নান্দেজ | ২০১২ | ২০২৩ (ইএফএ কাপ) | ১১ বছর |
লামিন ইয়ামাল | ২০২৩ | ২০২৪ (উয়েফা ইউরো) | ১ বছর |
নেইমার জুনিয়র | ২০০৯ | ২০১১ (কোপা লিবার্তাদোরেস) | ২ বছর |
সবাই দ্রুত সাফল্যের মুখ দেখেন না—কেইনের গল্প সেটাই প্রমাণ করে। তিনি গোল করে গেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলকে টেনেছেন—শুধু ভাগ্য হয়তো পাশে ছিল না। কিন্তু শেষমেশ সাফল্য ধরা দিয়েছে।
ট্রফি হয়তো যেকোনো তারকার নামের পাশে বাড়তি জৌলুস এনে দেয়, তবে কেইনের মতো গল্পগুলোই অনুপ্রেরণার জ্বালানি।
তবে প্রশ্ন থাকে ট্রফির মাপকাঠিতেই কি একজন খেলোয়াড়ের সাফল্য মাপা উচিত?
মন্তব্য করুন