দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শেষে অবশেষে শান্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। দেশটির স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসনামলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। তবে বিদ্রোহীদের কাছে সরকার পতনের পর অবশেষে স্বদেশে ফেরার স্বাদ পাচ্ছেন তারা।
সবচেয়ে বেশি সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় দেওয়া তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার সিরীয় শরণার্থী আসাদের পতনের পর স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়, তুরস্কের মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, তুরস্কে অস্থায়ী সুরক্ষা সুবিধা পাওয়া সিরীয়দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মে মাসে দেশটিতে বসবাসরত সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৪২১ জনে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ২০২১ সালের মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, আসাদ সরকারের পতনের পর বহু সিরীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তারা ফিরে যাচ্ছেন স্বেচ্ছায়, কারণ দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়ায় শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে। এই দীর্ঘ সংঘাতে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তাদের বেশিরভাগই তুরস্ক, লেবানন ও জর্দানের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন।
তুরস্কে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় অংশই সিরীয় নাগরিক।
বিশ্লেষকদের মতে, আসাদ সরকারের পতনের ফলে সিরিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে। ফলে বহু শরণার্থী, বিশেষ করে পরিবারসহ তুরস্কে অবস্থানরতরা, নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
যদিও অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন, তবে বিশাল সংখ্যক সিরীয় এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো, কর্মসংস্থানের অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জগুলো এখন সিরিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
মন্তব্য করুন