ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা যখন পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শনিবার (১৪ জুন) ইরানি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, ইরান একটি ঐক্যবদ্ধ ও ঈমানদার জাতি। তাদের ঘাড়ে কেউ চড়তে পারবে না। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
পার্স টুডে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ইরানি সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে এই ভাষণ দেন খামেনি।
ভাষণের শুরুতেই খামেনি নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন প্রিয় কমান্ডার, দক্ষ বিজ্ঞানী ও নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক শাহাদাত বরণ করেছেন। এ ঘটনা আমাদের জন্য গভীর শোক ও দুঃখের, তবে একইসঙ্গে এটি একটি গর্বের বিষয় যে, তারা দেশ ও ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। ইরানি জাতি জানে কীভাবে শহীদের সম্মান রক্ষা করতে হয়।’
খামেনি তার ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েল কেবল একটি হামলা চালিয়ে দায় শেষ করেছে এমনটা ভাবলে ভুল করবে। এই হামলার মধ্য দিয়েই ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের সূচনা করেছে। ইহুদিবাদী শত্রু এক ভয়ানক অপরাধ করেছে, যার থেকে তারা কোনোভাবেই রেহাই পাবে না। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনী অবশ্যই এই ঘৃণিত হামলার কঠিন জবাব দেবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘চূড়ান্ত জবাব’ আসছে।
ভাষণে খামেনি ইরানের সেনাবাহিনী, বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি), বিমান প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পূর্ণ প্রস্তুতিতে রয়েছে। দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সবাই সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করেন, ইরান একটি ঐক্যবদ্ধ ও ঈমানদার জাতি। তাদের ঘাড়ে কেউ চড়তে পারবে না। ইসরায়েল ও তার মিত্ররা যদি ভেবে থাকে তারা ইরানকে দমিয়ে রাখতে পারবে, তাহলে তারা চরম ভুল করছে।
খামেনি তার ভাষণে ধর্মীয় আবেগ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায়, আমরা বিজয় অর্জন করব। ইসরায়েল পরাজিত হবে। ইরানি জাতি কখনো তাদের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় এবং আমরা কোনো ধরনের ত্রুটি করব না।
খামেনি দৃঢ়ভাবে জানান, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা যদি ভেবে থাকেন, তারা ইরানকে উসকানি দিয়ে পার পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ইতিহাস ভুলে গেছে। এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো ন্যায়বিচার ও আগ্রাসনের অবসান।
এই ভাষণকে বিশ্লেষকরা একটি মোড় ঘোরানো রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইরান হয়তো এবার সরাসরি বড় ধরনের সামরিক জবাব দিতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়াবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলও মার্কিন সমর্থন নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে চাইছে। দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে।
মন্তব্য করুন