আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে ইরানে এসেছেন এক নারী। ভেবেছিলেন, ইরান নিরাপদ স্থান। সুখে শান্তিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করবেন। কিন্তু সেই পরিবার এখন এক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আল জাজিরা শনিবার (২৮ জুন) ৩৪ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী সেই নারীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। তাতে উঠে আসে অনিশ্চিত জীবনের এক মর্মান্তিক গল্প।
গত ১৩ জুন যখন তেহরানের ওপর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি শুরু হয় তখন শামসি নামের ওই নারীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সেই হামলা তাকে আবারও মনে করিয়ে দেয়, তিনি এবং তার পরিবার কতটা অরক্ষিত।
হামলার সময় দুই সন্তানের জননী শামসি উত্তর তেহরানে তার সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। আতঙ্ক এবং ভয়ের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে তিনি বাড়ি ফিরে দেখন, তার পাঁচ এবং সাত বছর বয়সী মেয়েরা একটি টেবিলের নিচে লুকিয়ে আছে। শিশুরা কাঁপছিল। তারা চিৎকার করার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলে।
মাত্র এক বছর আগে আফগানিস্তানে তালেবান শাসন থেকে পালিয়ে এসেছিলেন শামসি। আশা করেছিলেন ইরান নিরাপত্তা দেবে। এখন তিনি আরও একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন। এবার কোনো আশ্রয়, কোনো মর্যাদা এবং কোনো উপায় নেই। কারণ, তিনি অ-নথিভুক্ত। তার শুধু আতঙ্ক।
শামসি উত্তর তেহরান থেকে আল জাজিরাকে বলেন, আমি তালেবানদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছি কিন্তু এখানে আমাদের মাথার ওপর বোমা বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা এখানে নিরাপত্তার জন্য এসেছিলাম কিন্তু আমরা জানি না কোথায় যাব।
নিরাপত্তার কারণে কেবল তার প্রথম নাম দিয়েই পরিচিত করতে আল জাজিরাকে অনুরোধ করেন। তাকে খুঁজে বের করা যায় এমন কোনো বিস্তারিত তথ্য না জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
আফগানিস্তানের সাবেক মানবাধিকারকর্মী শামসি। তার স্বামী ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার আগে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তানের সৈনিক ছিলেন। তাদের কাজের জন্য তালেবানদের কাছ থেকে প্রতিশোধের ভয়ে অস্থায়ী ভিসায় ইরানে পালিয়ে আসেন। কিন্তু ইরান থেকে বেরিয়ে তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান দিয়ে পুনরায় প্রবেশের খরচ এবং বাধ্যবাধকতার কারণে তারা তাদের ভিসা নবায়ন করতে পারছেন না। এটি এমন একটি যাত্রা যা খুব বিপজ্জনক।
শামসি বলেন, ইরানে জীবন সহজ না। বৈধভাবে বসবাস না করলে শামসির মতো মানুষের কর্মক্ষেত্রে কোনো সুরক্ষা, কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং কোনো সাহায্যের সুযোগ নেই। ইরানিদের কাছ থেকে বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে এখানে কোনো সাহায্য পাওয়ার আশা নেই।
মন্তব্য করুন