যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী তার প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে স্বাক্ষর করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার নিজের ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, এই চুক্তির জেরে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে। সব ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিরা মুক্তি পাবে এবং ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে আর কোনো বাধা থাকবে না। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ঘোষণা দিলে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এ চুক্তিতে সম্মতি জানায়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল, হামাস, মিশর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে পর্যটন শহর শারম আল শেখ-এ ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে সংলাপের পর ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি সই করে দুই পক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী, সব ইহুদি বন্দিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। বিপরীতে গাজায় মোতায়েন সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনবে ইসরায়েল। তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেতে পারেন।
তবে, বিশ্বজুড়ে যখন গাজার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সংহতির ঢেউ, ঠিক তখন ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নৃশংসতা যেন আরও একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজা নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গাজার বাসিন্দাদের উত্তর গাজায় ফিরে যেতে কঠোরভাবে সতর্ক করে বলেছেন, এলাকাটি এখনো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’। অন্ধকারাচ্ছন্ন গাজার সড়কে মাইক হাতে নিয়ে যুদ্ধবিরতির বার্তা দিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। ঠিক তখনই ইসরায়েলি সেনার সতর্কতা সেই আশাকে অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢেকে দিচ্ছে।
এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফেরার বিষয়ে কঠোর সতর্কতা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র আভিচায় আদরাই বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চল এখনো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটি ঘিরে রেখেছে। সেখানে ফিরে যাওয়া জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কেউ যেন উত্তরে না ফেরেন।
এ দিন বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর এসেছে। গাজা সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর জানিয়েছেন, চুক্তি ঘোষণার পরও গাজা সিটি ও আশপাশে ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। এএফপির খবরে বলা হয়, বুধবার রাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও উত্তর গাজায় একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব হামলায় হতাহতের সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন