গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে, তবে ধ্বংসলীলা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এরই মাঝে বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি ভয়াবহ আগ্রাসনের ফলে অনেকেই নিজের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় কেউ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন, আবার কেউ হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। বলছেন, গাজায় আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদেরই একজন হলেন ৮৯ বছর বয়সী আয়িস ইউনুস। এই বৃদ্ধ গাজাকে নিজ চোখে দুবার ধ্বংস হতে দেখে পুরোপুরিভাবে আশাহত হয়ে পড়েছেন।
১৯৪৮ সালে আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধে গাজাকে একবার ধ্বংস হতে দেখেছেন আয়িস। এরপর জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আবার সাক্ষী হলেন নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাসের। ব্রিটিশ শাসিত ফিলিস্তিনে তার ছিল স্বপ্নের আঙুর বাগান, গম ও ভুট্টার ক্ষেত। কিন্তু মাত্র ১২ বছর বয়সে আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের ফলে সবকিছু ফেলে রেখে দাদির সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। এই বৃদ্ধ বলেন, ওই সময়ে তার পরিবার বারবারা অঞ্চলে বসবাস করত। কিন্তু ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো তাদের শক্তি না থাকায় জীবন বাচাঁতে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যান।
আয়িস ও তার দাদি উটের পিঠে করে ওই সময়ে বারবারা থেকে সাত মাইল দক্ষিণে চলে যান। যেটি ছিল মিসরের দখলে এবং পরিবর্তীতে এটি গাজা উপত্যকা হিসেবে পরিচিতি পায়। ওই সময়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ২৫ মাইল এবং চাওড়ায় ছিল মাত্র কয়েক মাইল। তখন অঞ্চলটি সবে মাত্র মিসর দখলে নিয়েছিল। ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সালে আরব ও ইসরায়েল যুদ্ধে অন্তত ৭ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর হারিয়ে শরণার্থী হয়ে পড়েন। এর ফলে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকা হিসিবে পরিচিতি পাওয়া ওই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সেখানে বসবাসের জন্য কাঠের টুকরা দিয়ে একটি আশ্রয়স্থল গড়ে তোলেন আয়িস। পরে ওই স্থানে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠিত তাঁবু ক্যাম্পে চলে যায় তার পরিবার।
ফিলিস্তিনের এই বৃদ্ধ এখন গাজার খান ইউনিসের আল মাওয়াশি এলাকায় বসবাস করছেন। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাত মাস পর গত বছর রাফার দক্ষিণ গাজা শহর থেকে আবারও বাস্তুচ্যুত হন আয়িস ও তার পরিবার। ওই অঞ্চলে থাকা তার বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন কয়েক মিটার জুড়ে সাদা তাবু টাঙিয়ে ছোট ছোট আশ্রয় গড়ে তেলা হয়েছে।
আঠারো সন্তানের বাবা আয়িসের ৭৯ জন নাতি-নাতনি রয়েছে। এদের মধ্যে দুজন কয়েক মাস আগেই জন্ম নিয়েছে। এ অবস্থায় গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। তবে দুইবার গাজাকে নিজের চোখে ধ্বংস হতে দেখে তিনি নিরাশ হয়ে পড়েছেন। বলছেন, গাজায় আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
মন্তব্য করুন