

রাজস্থানের মরুভূমির নীরবতা হঠাৎ করেই ভেঙে গেল এক উৎসবের কোলাহলে। বালুর টিলার মাঝে, উটের পায়ের ধুলোয় আকাশ যেন মেঘলা হয়ে ওঠে। আর এ সময় চারপাশ থেকে ভেসে আসে ঢাক-ঢোল, বাঁশির সুর আর মানুষের উচ্ছ্বাসের শব্দ। মরুভূমি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে আবারও—কারণ শুরু হয়েছে বিখ্যাত পুস্কর মেলা, যাকে অনেকে বলেন- উটের উৎসব।
প্রতি বছর এই সময়ে রাজস্থানের ছোট শহর পুস্কর যেন বদলে যায় এক প্রাণচঞ্চল মেলায়। শুক্রবার ভোরেই শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৭ দিন পর্যন্ত। মেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। দেশি-বিদেশি পর্যটক থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার আর পশুপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শুরুটা সাধারণ গবাদিপশুর বাজার হিসেবে হলেও বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম বড় প্রাণীমেলা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর এই মেলায় অন্তত পঞ্চাশ হাজার উট অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
চোখে পড়ার মতো দৃশ্য ছিল—উটগুলোর গায়ে ঝুলছে রঙিন কাপড়, ঝমঝমে ঘণ্টা, মুক্তোর মালা, আর পিঠে আঁকা বিভিন্ন জটিল নকশা। অনেক উট মালিক মাসের পর মাস ধরে এই সাজসজ্জার প্রস্তুতি নেন। কেউ কেউ বলেন এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি আমাদের সবার গর্ব।
প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে আছে উটের জন্য সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা—যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের উটদের সবচেয়ে উজ্জ্বল আর ঝলমলে পোশাকে সাজিয়ে হাজির করেন। কেউ আবার উটকে দিয়ে নানা কসরত দেখান—পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানো, ঘুরে ঘুরে নাচা, কিংবা মাথা দোলাতে দোলাতে বাদ্যের তালে তাল মেলানো। একজন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক মেলায় এসে মুগ্ধ হয়ে বলেন-আমরা তো শুধু উট দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু এভাবে ওদের সাজানো আর নাচ দেখাটা একেবারে অবিশ্বাস্য লেগেছে, আমরা মুগ্ধ!
একজন উট মালিক হাসতে হাসতে বলেন- এই বছর আমি জিতবই। গত এক বছর ধরে এখানে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মেলা শেষ হলেই আবার নতুন ডিজাইন ভাবতে বসব। অন্যদিকে, একজন অভিজ্ঞ সাজসজ্জা শিল্পী জানালেন- আমি গত ৩৮ বছর ধরে উট সাজাচ্ছি, ৬ বার প্রতিযোগিতায় জিতেছি। এবার অংশ নিচ্ছি শুধু প্রদর্শনের জন্য।
মেলায় শুধু উটই নয়, আছে লোকসঙ্গীত, নাচ, স্থানীয় খাবার আর হস্তশিল্পের দোকানও। সন্ধ্যা নামলে মরুভূমির বুকে আলোয় আলোকিত হয় পুস্কর হ্রদের চারপাশ, এসময় বেজে ওঠে লোকগানের সুর, আর ভেসে ওঠে সেই পুরোনো রঙিন মরুভূমির পরিচিত এক গন্ধ। এবছর পুস্কর মেলা চলবে ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত—আর ততদিন পর্যন্ত মরুভূমির এই উৎসব চলবে যেন এক অবিরাম রঙ, গন্ধ আর উচ্ছ্বাসের মেলবন্ধনে।
মন্তব্য করুন