সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নিজেদের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে এ হামলায় শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটি। তবে এসবের বেশিরভাগ ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। এবার এসব ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে নিজেদের ব্যয়ের পরিমাণ জানিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে বরাতে টিআরটি ওয়াল্ডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান থেকে রাতভর ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলের ১৩৫ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। ইসরায়েলি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন শ্যাকেলেও ওপরে।
ইসরায়েলি সংবাদামাধ্যম ইয়েদিওথ আহরনোথে রোববার ইসরায়েলি চিফ অব স্টাফের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাম অমিনাচের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত রাতের হামলার জন্য কেবল প্রতিরক্ষা ব্যয় হয়েছে ১৩৫ কোটি ডলার।
তিনি বলেন, আমি এটা কেবল ইরান থেকে থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যয়ের কথা বলছি। এ সময়ে ঘটা অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছি না।
ইরানের এ হামলা ঠেকাতে অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা জানান, অ্যারো ডিফেন্স দিয়ে ইরানের একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকানোর প্রায় ৩৫ লাখ ডলার ব্যয় করতে হয়। যেখানে ম্যাজিক ওয়ান্ড নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ১০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানও অংশ নিয়েছে। সেসব বাদেই এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর আগে রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ইরান থেকে ইসরায়েলের প্রায় ৩৫০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই আকাশেই আটকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের ছোড়া ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২৫টি ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া তাদের ছোড়া ১২০টির বেশি ব্যালেস্টিক মিসাইলের বেশিরভাগই নিস্ক্রিয় করা হয়েছে। এর মাত্র কয়েকটি ইসরায়েলের আকাশে প্রবেশ করেছে। ইরানের হামলায় নেভাতিম বিমান ঘাঁটিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইরানের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিনশরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। সেগুলোর বেশিরভাগ ইসরায়েল প্রতিহত করলেও অন্তত ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মাটিতে আঘাত হেনেছে।
ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা নিউজ জানিয়েছে, রেমন ঘাঁটিতে দ্রুতগতির ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হামলার কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রেমন বিমানঘাঁটিতে খুব দ্রুতগতিতে আঘাত হানছে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। ওই সময় সেখানে আগুনের ফুলকিও দেখা যায়।
মূলত, চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান।
মন্তব্য করুন