ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদত্যাগ করতে পারেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে টানা প্রায় সাত মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে না পারা, হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধার করতে না পারা, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়াসহ একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে পারেন সামরিক বাহিনীর প্রধান।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে ইসরায়েলজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল হার্জি হালেভি ‘কিছুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’ ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম শনিবার এ কথা জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে দায়ী সমস্ত কর্মকর্তাকে ‘ঘরে ফিরে যেতে হবে, চিফ অব স্টাফ থেকে শুরু করে সবাইকেই।’
ইসরায়েলের বেসরকারি সম্প্রচারকারী ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভার পদত্যাগের পর অন্যদের পদত্যাগের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে। এমনকি অনেক অফিসার ‘যুদ্ধবিষয়ক তদন্তের প্রস্তুতির জন্য’ আইনি সহায়তা চেয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের শত শত যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জনের বেশি মানুষকে আটক করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল।
সপ্তম মাসে পৌঁছানো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এই যুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকট তৈরি করেছে। যুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
অবশ্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
মন্তব্য করুন