রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে শামদেশ বলতে যেসব অঞ্চলকে বোঝানো হতো তার মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিন ভূখণ্ড। শামদেশ ও বিশেষ করে বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার আশপাশের এলাকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বেশকিছু ভবিষ্যদ্বাণী আছে।
রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে একদল বিশেষ শ্রেণির লোক থাকবে, যারা সত্যের পথে লড়াই করতে থাকবে। তাদের সঙ্গে আল্লাহর সাহায্য থাকবে।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধীপক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ তথা কিয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কোথায় থাকবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারা বায়তুল মুকাদ্দিস ও তার আশপাশে থাকবে।
ফিলিস্তিনের আলোচনায় 'নাকবা' শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। এ শব্দটি ফিলিস্তিনি জনসাধরণের স্মৃতিতে দুটি খুব খারাপ বিষয় ভাসিয়ে তোলে।
প্রথমত ১৯৪৮ সালে ইসরাইল গঠন এবং দ্বিতীয়ত সেই সময় তাদের জন্মভূমি থেকে ৮ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কার। নাকবা দিবসটি কেবল সেই বছর ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তারই প্রতীক নয় বরং গত কয়েক দশক ধরে এই জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া কষ্ট ও সমস্যারও প্রতিনিধিত্ব করে।
ওই সময় ৬টিরও বেশি শহর ও গ্রাম ধ্বংস করা হয়। এসব অপরাধের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা। কিন্তু ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার উল্টো রেজাল্ট হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইসরায়েলের এই চেষ্টা ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, ফিলিস্তিন এবং এর বাইরে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৯৪৮ সালের নাকবার পর থেকে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। ১৯৬৭ সালের জুনে যুদ্ধের পরে প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি এবং ২ লাখ ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও ২০২৩ সালের শেষে বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ১৪.৬৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।
এই পরিসংখ্যান অনুসারে, ৫.৫৫ মিলিয়ন মানুষ ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে বাস করে এবং প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি ১৯৪৮ সালে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে বাস করে। এ ছাড়া আরব দেশে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ৬.৫৬ মিলিয়ন এবং প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনি বিদেশে অন্যান্য দেশে বসবাস করছে।
ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এভাবে ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ৭.৩ মিলিয়নে পৌঁছেছে। যেখানে ইহুদি জনসংখ্যা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ছিল ৭.২ মিলিয়ন। অর্থাৎ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেশি।
এই বিবৃতিতে, ইসরায়েলের সঙ্গে ৭৬ বছরের সংঘাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা সম্পর্কেও বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় ১৯৪৮ সালের নাকবা থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এই প্রতিবেদন অনুসারে ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল আল-আকসা ইন্তিফাদার শুরু পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
কয়েক দশক আগে আন্তর্জাতিক চাপ এবং প্রতিরোধ ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা তা করতে পেরেছে ইসরায়েল। কিন্তু এখন যত দিন যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে শুধু ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে লড়াই হতো। কিন্তু এখন ফিলিস্তিন থেকে লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরাক পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিরোধ ফ্রন্টকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেইও ব্যাপক চাপে পড়েছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
মন্তব্য করুন