কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ১১:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরবদের মুনাফেকি ও সুপার হিরোদের অবদান

আয়াতুল্লাহ খামেনি, আনোয়ার ইব্রাহিম ও রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি : সংগৃহীত
আয়াতুল্লাহ খামেনি, আনোয়ার ইব্রাহিম ও রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি : সংগৃহীত

নীড় হারা পাখিদের মতো ফিলিস্তিনি মানুষের কোনো ঘর নেই। দশকের পর দশক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে তারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। এক্ষেত্রে কিছু আবর রাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতকতা অনেকাংশ দায়ী। ফিলিস্তিনিদের কাছে একদিকে কিছু আরব রাষ্ট্রের নেতারা বিশ্বাসঘাতক অন্যদিকে কিছু মুসলিম দেশের নেতারা সুপার হিরো। সুপার হিরোদের তালিকায় রয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খানসহ আরও অনেকেই।

ফিলিস্তিনে যখন ইসরায়েল অভিযান চালাচ্ছে, কারও কথায় পাত্তা না দিয়ে নির্বিচার শহরগুলো ধ্বংস করছে, তখন আরব দেশগুলো অর্থপূর্ণভাবে এগিয়ে আসছে না। তারা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ মাথায় রেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, কোনোভাবেই তারা নৈতিক অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তার প্রমাণ হলো- ইসরায়েল এত অপরাধ করার পরও আরব দেশগুলো তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে না।

আরব দেশগুলোর এই আরচণের দুটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ, আরব নেতারা ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতাকে ভয় পান; বিশেষ করে ইসরায়েল কার্যত একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় তাদের ভয়টা বেশি।

দ্বিতীয় কারণ হলো, এই শাসকেরা কোনোভাবেই পশ্চিমা শক্তিগুলোকে খেপিয়ে তুলতে চান না। এই শাসকেরা ভালো করেই বুঝতে পারেন, ইসরায়েল পশ্চিমাদের একটি সাম্রাজ্যবাদী সহচর। তাঁরা সবদিক হিসাব–নিকাশ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, যেহেতু তাঁরা মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবেন না, পশ্চিমাদের তালে তাল মেলালে অনেক আর্থিক লাভ হয়, সেহেতু পশ্চিমাদের কথার বাইরে না গিয়ে চলাই সবদিক থেকে নিরাপদ।

তবে এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের মতো নেতারা। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তুরস্ক ইসরায়েলের ওপর সর্বাত্মক বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করেছে। এরদোয়ান সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।

এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েল তুরস্কের ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কের নিষেধাজ্ঞা জারির পর কয়েক দিন যেতে যেতে না যেতেই ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা রাফায় গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওপর স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ওআইসি ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু তা কার্যকর করতে সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

তুরস্ক প্রথমবারের মতো একটি দেশের ওপর এত ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছে। দেশটির সব বন্দর ও বাণিজ্য এলাকা ইসরায়েলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর এরদোয়ান তুর্কি আকাশসীমা, দারদানেলিস এবং বসফরাস প্রণালিও বন্ধ করে দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করলে ইসরায়েলের জন্য একটি ঐতিহাসিক প্রশ্নের সূচনা এবং ‘অস্তিত্বগত সংকট’ সৃষ্টি হবে। শুধু তাই নয়, এরদোয়ান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবদান রাখার পাশাপাশি হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে তুরস্কে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

ফিলিস্তিদের জন্য লড়াই করছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরানও। দেশটি অস্ত্র, অর্থ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাকের কাতায়েব হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়েছে।

বসে নেই মালয়েশিয়াও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নেতাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে সমর্থন জানিয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম কাতারে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। স্থানীয় কয়েকটি মিডিয়া ওই ছবি প্রকাশ করলে ফেসবুক পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলে। এতে ফিলিস্তিনিদের সোচ্চার সমর্থক মালয়েশিয়া সরকার এর তীব্র সমালোচনা করে।

মেটার কাছে পাঠানা এক চিঠিতে মালয়েশিয়া প্রধানমন্ত্রীর ছবিগুলো সরানোর ব্যাখ্যা দাবি করে এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যে, তাদের প্লাটফর্মে ফিলিস্তিনপন্থি কনটেন্ট ব্লক করা হলে তাদের মালয়েশিয়ায় শাস্তি পেতে হবে। এই হুঁশিয়ারির পর মেটার মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, দুটি পোস্ট সরানো ছিল ভুল। সেগুলো আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া কাতার এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বেশ সোচ্চার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম

‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির’

হাটহাজারীতে তিন দিনে ৪ মরদেহ

কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৩ ধর্ষককে ধরে পুলিশে দিল জনতা 

যে কারণে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটে সমস্যা দেখছেন না মির্জা গালিব

বিচারকের ছেলেকে হত্যা / এক সপ্তাহ আগে জিডিতে বিচারকের স্ত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন

৪ বিভাগে নতুন কমিশনার

বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় ১ জনের মৃত্যু

বিমানবন্দর এলাকায় ২ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ

এএমএফ এশিয়া মার্কেটিং এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন ইমরান কাদির

১০

বিএনপি জনগণের দল : বাবুল

১১

প্রশাসনকে জনগণের পাশে থাকতে হবে : গয়েশ্বর

১২

জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই : সেলিমুজ্জামান 

১৩

সম্পাদক পরিষদের নতুন কমিটি 

১৪

২৩ জেলায় নতুন ডিসি

১৫

বিএনপি কর্মীর মাথা ফাটালেন জামায়াত নেতারা

১৬

ঝিনাইদহে শেখ মুজিবের ‘এক তর্জনি’ স্তম্ভ গুড়িয়ে দিল ছাত্র-জনতা

১৭

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম

১৮

চট্টগ্রামে ৫০টি অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ

১৯

অপসো স্যালাইন শ্রমিকদের প্রতীকী অনশন

২০
X