ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ ইহুদি নাগরিক। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মার্কিন ইহুদি বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে, আর প্রতি ১০ জনের চারজন মনে করেন—ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে।
এই তথ্য উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের সর্বশেষ জরিপে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সমর্থক। কিন্তু সাম্প্রতিক এই জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে—গাজা যুদ্ধ ইসরায়েল-সমর্থক মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে এক ‘ঐতিহাসিক বিভাজন’ তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মা করে। এরপর ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজার মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার নেয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দুই বছরে ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং পুরো অঞ্চল এখন খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে জর্জরিত।
নেতানিয়াহুর প্রতি আস্থাহীনতা
জরিপে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ ইহুদি বর্তমান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৪৮ শতাংশ) বলেছেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব ‘অত্যন্ত দুর্বল’। পাঁচ বছর আগের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপের তুলনায় এটি প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি।
তবে ইহুদিদের মধ্যে হামাসবিরোধী মনোভাব অত্যন্ত প্রবল। ৯৪ শতাংশ ইহুদি মনে করেন, হামাসও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ করেছে।
গাজা অভিযানে ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে মার্কিন ইহুদিদের মধ্যে মতভেদও চোখে পড়েছে। ৪৬ শতাংশ এখনো অভিযানের পক্ষে, আর ৪৮ শতাংশ এর বিরোধিতা করছেন। তুলনামূলকভাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক জনগণের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন। জুলাই মাসে গ্যালাপের এক জরিপে দেখা যায়, সব আমেরিকানের মধ্যে মাত্র ৩২ শতাংশ ইসরায়েলের অভিযানকে সমর্থন করেন, আর ৬০ শতাংশ তা নিন্দা করেন।
‘সহানুভূতি ছিল, কিন্তু এখন ঘৃণা জন্মেছে’
ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে কথা বলার সময় জরিপে অংশ নেওয়া অনেকেই জানিয়েছেন, শুরুতে তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা অভিযানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং গাজায় নারকীয় মানবিক বিপর্যয় বাড়তে থাকায় সেই সহানুভূতি এখন ঘৃণায় পরিণত হয়েছে।
ওয়াশিংটনের বাসিন্দা জুলিয়া সিডম্যান (৪২) বলেন, ‘শুরুতে ইসরায়েলের সামনে অন্যকোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু এখন, দুই বছর পর যে পরিমাণ মানবিক বিপর্যয় ঘটছে—তা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। আমি ঘৃণিত ও ক্লান্ত।’
তবুও জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ মার্কিন ইহুদি ইসরায়েল রাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর আবেগিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন বজায় রেখেছেন। ৭৬ শতাংশ বলেছেন, ইসরায়েলের অস্তিত্ব ইহুদি জাতির ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য এবং ৫৮ শতাংশ মনে করেন, তাদের সঙ্গে ইসরায়েলি ইহুদিদের অনেক মিল রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে—ইসরায়েলি নীতির প্রতি সমর্থন থাকলেও গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে মার্কিন ইহুদিদের ভেতরে এখন এক গভীর নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য করুন