টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে সাবমেরিন টাইটান নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। সমুদ্র তলদেশে সাবমেরিনটি বিস্ফোরণের শিকার হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড।
সাবমেরিন টাইটানের মালিক হলো নিউফাউনল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। কোম্পানিটি আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে পড়ে থাকা বিখ্যাত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে যায়। এ জন্য জনপ্রতি তাদের গুনতে হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই কোটি টাকা।
গত রোববার পাঁচ পর্যটক নিয়ে সাগরে নিখোঁজ হওয়ার পর সাবমেরিনটির নানা ত্রুটির কথা সামনে আসছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সাগরের গভীর তলদেশে যেতে হলে যে কোনো সাবমেরিন কিংবা ছোট সাবমারসিবলের বেশ কিছু পরীক্ষা করতে হয়। সেগুলো পাস করলেই মেলে নিরাপত্তা সনদ। তবে টাইটান সাবমেরিনের এমন কোনো সনদ ছিল না। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২০১৯ সালে বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো সদুত্তর দেয়নি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। উল্টো চালিয়ে গেছে সব কার্যক্রম। এরই মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটল।
সাগরের চার হাজার মিটার গভীরতায় ডুব দেওয়ার সক্ষমতা আছে বিশ্বের মাত্র ১০টি সাবমেরিনের। এদের মধ্যে টাইটানও একটি দাবি করা হলেও এর কোনো সনদ ছিল না। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেজ্ঞরা।
এর আগেও টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটকরা। মেক্সিকান এক পর্যটক নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘টাইটানের মতো ছোট ডুবোযান নিয়ে সাগরের এত গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। সাগরের নিচে যাওয়ার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কিছুক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পরও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল না হলে অভিযান বাতিল করতে হয়। সেবার সাগরের ১ হাজার মিটার গভীরে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন আমরা অভিযান বাতিল করে ওপরে উঠে আসি।’
তবে এতসব অভিযোগ থাকার পরও টাইটানে কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল না বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ওশানগেট। উল্টো এর মাধ্যমে গভীর সাগরে যাওয়াকে নিরাপদ বলে সাফাই গেয়ে আসছে তারা।
১০০ বছরের বেশি সময় আগে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিক। জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল ডুবোযান টাইটান।
আটলান্টিকের গভীরে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ ‘পোলার প্রিন্সের’ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান।
চার দিনের শ্বাসরুদ্ধকর তল্লাশি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, ভয়ংকর বিস্ফোরণে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে টাইটান। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া গেছে টাইটানের ধ্বংসস্তূপ। তবে এর ভেতরের পাঁচ আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড।
মন্তব্য করুন