কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে একটি পেশা। ফলে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ কর্মী চাকরিচ্যুতের ঝুঁকিতে। এমনটি ঘটলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যানের মন্তব্যে ওই আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। তিনি জানান, এআইয়ের উন্নতির কারণে ভবিষ্যতে গ্রাহকসেবা খাতের চাকরি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ফেডারেল রিজার্ভ সম্মেলনে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইন্ডিয়া টুডেতে তার বক্তব্যের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে।
সম্মেলনে অল্টম্যান বলেন, প্রশ্নের উত্তর জানানো থেকে শুরু করে জটিল সমস্যার সমাধান এখন করতে পারছে এআই। এর কাজ দেখে অনেক সময় দক্ষ কর্মীর কাজ বলে ভ্রম হয়। এআই আগের তুলনায় অনেক দ্রুত ও নির্ভুল। এতে করে চাকরির কিছু ধারা অচিরেই প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে।
তার মতে, গ্রাহক সেবাসংক্রান্ত কাজগুলো এখন এআই ভালোভাবেই করতে পারে। এটি আরও উন্নতি করার মানে হলো, মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ জরুরি বলে বিবেচিত পেশাটিতে আর মানুষ নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। পেশাটির অনেক কাজই এখন এআইয়ের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব। ফলে গ্রাহকসেবা খাতে ইতিমধ্যে মানুষের জায়গা নিতে শুরু করেছে এআই।
মানবজাতির ধ্বংসের কারণ হবে কি এআই
অনেকেরই ধারণা, এআই ভবিষ্যতে মানুষের চেয়ে স্মার্ট হবে। এর ফলে এআই মানবসভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এজিআই বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি গুগল ডিপমাইন্ডের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের আগেই এজিআই মাত্রার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেখা মিলতে পারে। তখন বিশ্বজুড়ে এজিআইর বিশাল সম্ভাবনা ও প্রভাব থাকবে। এর ফলে মানবজাতি অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমনকি মানবতাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংসও করতে পারে এজিআই।
ডিপমাইন্ডের গবেষণায় এজিআইর ঝুঁকিকে এআইর অপব্যবহার, ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ, এআইর ভুল ও কাঠামোগত ঝুঁকি—এ ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। গবেষণায় ঝুঁকি মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরা হলেও এজিআইর কারণে কীভাবে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি এজিআই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্য জাতিসংঘের আদলে সংস্থা তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতেও ডিপমাইন্ডের ডেমিস হাসাবিস এজিআইর প্রভাব নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এজিআই প্রযুক্তির দেখা মিলতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সিসটেনশিয়াল রিস্ক বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ পদ্ধতি যতই শক্তিশালী হয়ে উঠবে, ততই এটি অতিবুদ্ধির অধিকারী হয়ে উঠবে। এটি হয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এ কারণেই অধ্যাপক রাসেল বলছেন, মানুষের উচিত রোবট বা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা। তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যন্ত্রকে আরও বেশি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা কাজ ঠিক করে দেওয়া এ সমস্যার সমাধান নয়। কারণ, মানুষ নিজেরাই ঠিকমতো জানে না যে, এসব উদ্দেশ্য আসলে কী?
মন্তব্য করুন