ডাইনিং টেবিলে সাজানো হলো সুস্বাদু বিফ ওয়েলিংটনসহ মজাদার সব খাবার। আর এসব খাবার ঘিরে জমে উঠেছে পরিবারের প্রিয়জনদের হাসি-আড্ডা। যেন পারিবারিক ভালোবাসা আর সম্পর্ক মেরামতের এক আয়োজন চলছে। কিন্তু কে জানত, সেই টেবিলেই অপেক্ষা করছে অদৃশ্য মৃত্যুর দূত।
একটি অচেনা বিশাক্ত মাশরুম মুহূর্তেই কেড়ে নেয় তাজা কয়েকটি প্রাণ। এটি কোনো গল্প বা উপন্যাস নয়, বরং বাস্তবেই এমনটি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের লিয়োংগাথা শহরে।
ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালে, যখন প্যাটারসন নিজের বাড়িতে দুপুরের খাবারের সময় স্বামীর মা-বাবা ও খালা-খালুর জন্য প্রস্তুত করেছিলেন বিফ ওয়েলিংটন। খাবারের মধ্যে তিনি ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে দেন। খাবার খাওয়ার পর তিনজনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষপর্যন্ত প্রাণ হারান।
আদালতের রায় ঘোষণার পর প্যাটারসন দাবি করেন, এটি ছিল দুর্ঘটনাজনিত। তিনি জানান, তিনি জানতেন না যে মাশরুম এত ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে। ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ মাশরুমের মতো এবং স্বাদও মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমাগত বিকল হতে শুরু করে এবং কয়েক দিনের মধ্যে প্রাণনাশ ঘটাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেথ ক্যাপ মাশরুম সাধারণ মাশরুমের মতো দেখায়। তাই ভুলবশত খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এই ঘটনায় আদালত স্পষ্ট করেছে, সচেতনভাবে খাবারে বিষযুক্ত উপাদান মিশিয়ে হত্যা করা এক গুরুতর অপরাধ, যা শাস্তিযোগ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।
এছাড়া, এই ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়েছেন, কিভাবে স্বাভাবিকভাবে ঘরে প্রস্তুত করা খাবারের মধ্যে এত ভয়ঙ্কর কিছু লুকানো থাকতে পারে। স্থানীয় আইন ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, খাদ্যে কোনো ধরনের বিষ বা অচেনা উপাদান ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকা জরুরি।
এরিন প্যাটারসনের এই ঘটনার রায় কেবল তার জন্য নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আদালতের সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, পারিবারিক নিরাপত্তা, সচেতনতা এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অবহেলা মৃত্যুর কারণ হতে পারে এবং এমন অপরাধের শাস্তি কঠোর হতে হবে।
মন্তব্য করুন