

অ্যারাকনোফোবিয়ায় বা মাকড়সাভীতিতে ভোগা মানুষদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন যেন সত্যি হলো! বিজ্ঞানীরা ভূগর্ভস্থ অন্ধকারে এমন এক দৃশ্য আবিষ্কার করেছেন, যা দেখলে শিউরে উঠবেন যে কেউ। একটি রহস্যময় গুহার গভীরে খুঁজে পাওয়া গেছে লক্ষাধিক মাকড়সার বিশাল সাম্রাজ্য। এই দৈত্যাকার মাকড়সার জালের বিস্তৃতি কোনো সামান্য জায়গাজুড়ে নয় বরং এটি ১০০ বর্গমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত! মাটির নিচে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে, ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মাকড়সা একসঙ্গে তাদের জাল বুনে চলেছে। কিন্তু কোথায় পাওয়া গেল এই মাকড়সার শহর?
এ যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘পৃথিবীর ওয়াইড ওয়েব’! গুহার ভেতর রোমানিয়ান বিজ্ঞানীরা এমন এক বিশাল মাকড়সার জাল আবিষ্কার করেছেন, যাকে তারা ‘বিশ্বের বৃহত্তম’ বলে দাবি করছেন। একসঙ্গে এই বিপুল সংখ্যক মাকড়সার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে অনেকের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু গবেষক দলটি এই আবিষ্কারে বিস্ময় ও মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।
এই বিশালাকার জালটি পাওয়া গেছে গ্রিস ও আলবেনিয়ার সীমান্তে অবস্থিত এক সালফার গুহায়, যা পৃথিবীর অন্যতম প্রতিকূল পরিবেশ হিসেবে পরিচিত। গুহার দেয়ালজুড়ে প্রায় ১,১৪০ বর্গফুট এলাকাজুড়ে এই জাল বিস্তৃত। জীববিজ্ঞানী ইস্তভান উরাকের নেতৃত্বে কয়েকজন গবেষক ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সালফার কেভ নামের একটি গুহায় মাকড়সার বিশাল এই আস্তানা নিয়ে অবিশ্বাস্য অনুসন্ধানের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
গবেষণাপত্র অনুযায়ী গুহার ভেতরের ছবিগুলোতে দেখা যায়, মাকড়সার ঘন জাল গুহার দেওয়াল ও ছাদ ঢেকে ফেলেছে। গবেষকদের মতে এই গুহায় দুটি স্বতন্ত্র প্রজাতি একই জালের মধ্যে একসঙ্গে অবস্থান করছে তাও করছে বিশাল সংখ্যায়। গুহার ভেতর যে বিশাল জালটি তৈরি হয়েছে তা প্রধানত প্রায় ৬৯ হাজার সাধারণ ও নিরীহ বার্ন ফানেল উইভার আর প্রায় ৪২ হাজার প্রিনেরিগন ভেগানস বা বামন উইভার দিয়ে তৈরি করেছে। আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, ফানেল উইভারদের সাধারণত বামন উইভারদের শিকার করার কথা, কিন্তু গবেষকরা বিশ্বাস করেন, গুহার সীমিত আলো এবং খাবারের প্রাচুর্য তাদের মধ্যে এই সহনশীল বা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ প্রকৃতির জন্ম দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই মাকড়সা সাম্রাজ্যের টিকে থাকার জন্য গুহার ইকোসিস্টেম বিশ্লেষণ করেছেন। অবাক করা বিষয় হলো, এই বিশাল প্রাণীর দল বেঁচে আছে এক অত্যন্ত সরল উপায়ে! প্রথমেই গুহার ভেতরে থাকা প্রচুর পরিমাণে সালফারকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের বিশেষ অণুজীবের স্তর তৈরি হয়। এই অণুজীবের স্তর খেয়ে জীবনধারণ করে এক ধরনের মাছির মতো পোকার শূককীট। সেই শূককীটগুলো যখন পূর্ণাঙ্গ মাছিতে পরিণত হয়, তখন তারা গুহার ভেতরে উড়ে বেড়ায়। আর এই উড়ন্ত মাছিগুলোই হয়ে ওঠে লক্ষাধিক মাকড়সার প্রধান এবং স্থির খাদ্য।
গুহার সালফার প্রথমে অণুজীবকে বাঁচায়, অণুজীবকে খেয়ে মাছি জন্ম নেয়, আর সেই মাছি খেয়েই লক্ষাধিক মাকড়সার বিশাল উপনিবেশ বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে। যদিও এই পুরো ইকোসিস্টেম নিয়ে আরও গবেষণা চলছে, গবেষক দলের প্রধান উরাক এটিকে তাদের জন্য অসাধারণ এক সাফল্য বলে মনে করছেন।
মন্তব্য করুন