

সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী দুটি হাত হারান। দুর্ঘটনার দিন ওই তরুণী বাসে করে তার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। পথে বাসটি উল্টে গেলে তার দুই হাত চূর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তরুণীর কনুইয়ের নিচ থেকে দুটি হাত কেটে ফেলতে বাধ্য হন। কিন্তু এই ঘটনার পরে এবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নজিরবিহীন এক ঘটনা ঘটেছে।
চিকিৎসকরা তার দুটি হাতই জীবীত এক তরুণের হাতের সঙ্গে অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে প্রতিস্থাপণ করেন। আর এর পরপরই ওই তরুণীর প্রতিস্থাপিত হাতে দেখা যায় আশ্চর্যজনক এক পরিবর্তন। দেখা যায়, শ্রেয়া সিদ্দানগৌড়া নামের ভারতীয় ওই তরুণীর নতুন প্রতিস্থাপিত হাতটির রং সময়ের সঙ্গে এবার বদলাতে শুরু করে। এটির রং একসময় পুরোপুরি বদলে গিয়ে তার শরীরের ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলে যায়। আর এর পরেই বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক রহস্যময় ঘটনা হয়ে ওঠে। বিশ্বের চিকিৎসা ইতিহাসে এটিই প্রথমবার, যেখানে এক পুরুষদাতার হাত এক নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এমন অভাবনীয় ঘটনার পর এবার চিকিৎসকরা দেখছেন আশার আলো।
তিন বছর আগে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শ্রেয়ার দুই হাত কেটে ফেলার পর ভারতের কেরালার অমৃতা ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসে তিনি হাত প্রতিস্থাপনের জন্য নিবন্ধন করেন। তখন এই প্রতিষ্ঠানটিই ছিল এশিয়ার একমাত্র সফল হাত প্রতিস্থাপন কেন্দ্র। ভাগ্যের জোরে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ভালো খবর আসে তার কাছে।
দাতা হিসেবে মেলে ২০ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রের হাত, যার নাম ছিল শচিন। পরে মোট ১৩ ঘণ্টা ধরে চলে জটিল এই অস্ত্রোপচার, যেখানে ২০ জন সার্জন ও ১৬ সদস্যের অ্যানেসথেসিয়া টিম একসঙ্গে কাজ করেন এবং তারা এতে সফল হন। এই অস্ত্রোপচারটি ছিল এশিয়ার প্রথম নারী-পুরুষ আন্তঃলিঙ্গ হাত প্রতিস্থাপনের একমাত্র ঘটনা।
প্রথমদিকে শ্রেয়ার নতুন হাত দুটি তার নিজের তুলনায় অনেক গাঢ় রঙের ছিল, আর আকারেও ছিল কিছুটা মোটা আকৃতির। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তার প্রতিস্থাপিত হাতদুটির রঙ বদলাতে শুরু করে। এখন সেই হাত দুটি আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় পুরোপুরি তার নিজের শরীরের রঙের সঙ্গে মিলে গেছে।
চিকিৎসকদের ধারণা, এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করছে শরীরের মেলানিন কোষ। প্রতিস্থাপনের এক বছর পর শরীরের লিম্ফ্যাটিক চ্যানেল খুলে যাওয়ার ফলে মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলো হয়তো ধীরে ধীরে দাতার কোষগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে। ফলে হাতের ত্বক নিজের মতো রঙ ধারণ করেছে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো—শুধু রঙ নয়, হাতের গঠনেও পরিবর্তন এসেছে। একসময় মোটা ও পুরুষসুলভ হাতগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কুচিত হয়ে নারীর হাতের মতো হয়ে উঠেছে। শ্রেয়ার মা বলেন, তার আঙুলগুলো এখন আরও সরু আর লম্বা মনে হয়, কবজিটাও ছোট হয়েছে। সবকিছু সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এমন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন আগে কখনও দেখা যায়নি। এখন তারা এই ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিস্থাপন নিয়ে আরও নির্ভুল ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। শ্রেয়া বর্তমানে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন। এখনো পুরোপুরি স্নায়ু ও পেশির নিয়ন্ত্রণ ফিরে না পেলেও, তিনি এখন নিজ হাতে লেখাপড়া ও দৈনন্দিন কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে...
মন্তব্য করুন