ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। দুনিয়া বিমুখতা, আল্লাহ ভীরুতা তার অন্তরের জায়গা করে নিয়েছিল। আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগি করে তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন।
তিনি দ্বিতীয় হিজরির বিখ্যাত সুফি ও ইসলাম বিশ্লেষক। মদখোর থেকে তিনি পৃথিবীর খ্যাতনামা ইমাম হয়েছিলেন। বলছিলাম মালেক ইবনে দিনার (রহ.) এর কথা।
ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করা খ্যাতনামা এই আলেমের জীবন একটা স্বপ্ন পাল্টে দিয়েছিল। একদিন এক মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
শুরুতেই এক শ্রোতা প্রশ্ন করলেন, আপনার বক্তব্য পরে শুনব। তার আগে একটি প্রশ্নের উত্তর দিন। বছর দশেক আগে আপনাকে মাতাল, ছন্নছাড়া অবস্থায় দেখেছি। অথচ আজ আপনার এই পরিবর্তন। কীভাবে সম্ভব?
শ্রোতার এমন প্রশ্নের উত্তরে মালেক ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, শুনুন সেদিন ছিল শবে কদরের রাত। শহরের মদের দোকানগুলো ছিল বন্ধ। এক দোকানিকে অনুরোধ করে মদ নিয়ে চলে এলাম বাসায়।
রাতে মদ ছাড়া ঘুমই আসত না। সেদিন বাসায় ঢুকেই দেখি স্ত্রী নামাজ পড়ছে।
নিশ্চুপে আমার ঘরে চলে এলাম। টেবিলে রাখলাম বোতলটা। হঠাৎ আমার তিন বছরের মেয়েটা দৌড়ে এলো। টেবিলে সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে মদের বোতলটি পড়ে ভেঙে গেল।
সেটা দেখে অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। মেয়ে বলে তাকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।
ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সে রাতে আর মদ খাওয়া হলো না। তারপর চলে গেছে এক বছর।
আবার এল লাইলাতুল কদর। অভ্যাস মতোই আমি মদ নিয়ে বাসায় এলাম। হঠাৎ বোতলের দিকে তাকাতেই বুক ভেঙে কান্না এলো। কারণ তিন মাস আগে আমার মেয়েটি ইন্তেকাল করেছে।
গতবার তার বোতল ভাঙার কাহিনী আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মদটা আর খেতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখলাম এক বিরাট সাপ আমাকে তাড়া করছে। ভয়ে আমি দৌড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখে অনুরোধ করলাম আমাকে রক্ষা করতে।
কিন্তু বৃদ্ধ বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সঙ্গে আমি পারব না। তুমি বরং এই পাহাড়ের ডানে যাও। বৃদ্ধের কথা মতো পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আর পেছনেই এগিয়ে আসছে সেই মোটা কুৎসিত সাপ। আমি বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর বাগানে বাচ্চারা খেলছে।
বাগানে ঢুকতে চাইলে দারোয়ান বাঁধা দিল। বাচ্চাদের ডেকে বলল, দেখতো এলোকটি কে? ওকে তো সাপটা খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটে এলো। এর মধ্যে তিন মাস আগে মৃত্যুবরণ করা আমার মেয়েটাকে দেখলাম।
মেয়েটা আমাকে ডান হাতে জড়িয়ে বাম হাতে সাপটাকে থাপ্পর দিলো। ভয়ে সাপ পালিয়ে গেলো।
বললাম, মা তুমি কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমাকে ভয় পায়? মেয়ে বলল, আমি তো জান্নাতি মেয়ে। জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়। বাবা ওই সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো? বললাম, না মা সাপকে তো চিনতে পারিনি। বাবা ওতো তোমার নফস। তুমি নফসকে এতো বেশি খাবার দিয়েছো তার জন্য শক্তিশালী হয়েছে।
বললাম, পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ এখানে আসতে বলে দিয়েছে। সে কে? মেয়ে বলল, সে তোমার রুহ। তাকে তো কোনোদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে।
এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেল। সেই দিন থেকে আমি আমার রুহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি আর নফসের খাদ্য একদম বন্ধ করে দিয়েছি। এখনো চোখ বুঝলেই নফসের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই। তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন মালেক বিন দিনার (রহঃ)। এরপর তিনি হয়ে যান ইসলামের মহামনীষী। পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে তার খ্যাতি।
মন্তব্য করুন