কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কর ফাঁকি দিয়ে সম্পত্তি বেচা-কেনা নিষিদ্ধের প্রস্তাব পাকিস্তানে

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব জাতীয় পরিষদে এই আইনটি পেশ করেন।ছবি : সংগৃহীত।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব জাতীয় পরিষদে এই আইনটি পেশ করেন।ছবি : সংগৃহীত।

পাকিস্তান সরকার কর ফাঁকি রোধে নতুন একটি আইন প্রস্তাব করেছে, যা দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং যারা কর দেয় না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দেশটির জাতীয় পরিষদে পেশ করা এই প্রস্তাবে নতুন কর আইন সংশোধনের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খবর ডন।

পেশ করা প্রস্তাবে দেশের কর কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি কর পরিশোধে অযোগ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, যারা কর ফাঁকি দিবেন, তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না। এছাড়া, ৮০০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ি কেনা, সম্পত্তি বিক্রি বা কেনাবেচা এবং নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি কর নিবন্ধন না করে কাজ করে, তাহলে সেটি সিলগালা করে দেওয়া হবে।

এই আইনটি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব জাতীয় পরিষদে পেশ করেছেন এবং এতে দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন আইনে ‘যোগ্য ব্যক্তি’ ও ‘অযোগ্য ব্যক্তি’ ধারণা নতুন আইনে ‘যোগ্য ব্যক্তি’ এবং ‘অযোগ্য ব্যক্তি’ শব্দ ব্যবহার করা হবে, যা কর পরিশোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ‘যোগ্য ব্যক্তি’ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং তার সম্পদের যথাযথ বিবরণ দিয়েছেন। এই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যেমন বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ২৫ বছরের নিচে ছেলে-মেয়ে এবং প্রতিবন্ধী সন্তান।

অপরদিকে, ‘অযোগ্য ব্যক্তি’ হলেন তারা, যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বা তাদের সম্পদের সঠিক বিবরণ দান করেননি। এই ব্যক্তিদের ওপর নানা বিধিনিষেধ থাকবে, যা তাদের আর্থিক লেনদেনের ওপর প্রভাব ফেলবে।

আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আইনের আওতায় ‘অযোগ্য ব্যক্তি’-দের জন্য বেশ কিছু আর্থিক লেনদেনের বিধিনিষেধ রয়েছে। তারা গাড়ি কিনতে পারবেন না, বিশেষত ৮০০ সিসি এর বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ি। এছাড়া, কোনো অযোগ্য ব্যক্তি যদি স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা করতে চান, তবে তা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সম্ভব হবে না।

একইভাবে, তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা পরিচালনা করতে পারবেন না, তবে ‘আসান অ্যাকাউন্ট’ (যা সহজ শর্তে খোলা যায়) খোলার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় থাকবে।

এছাড়া, অযোগ্য ব্যক্তিদের থেকে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক কার্যক্রমের ওপর নজর রাখবে এবং যদি কোনো ব্যক্তি তার ঘোষিত সম্পদের বাইরে আর্থিক লেনদেন করেন, তবে ব্যাংকগুলো তাদের প্রতিবেদন করবে।

জরিমানা ও শাস্তির বিধান নতুন আইনটি কর কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালী করে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা, সম্পদ জব্দ করা এবং যে ব্যবসা কর নিবন্ধনে ব্যর্থ হবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ব্যবসাগুলো যদি দুই দিনের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করে, তবে এসব শাস্তির বিধান প্রত্যাহার করা হবে।

এছাড়া, সঠিক কর স্ট্যাম্প, স্টিকার বা বারকোড ছাড়া পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কর কর্তৃপক্ষ এমন পণ্যগুলোর উপর নজর রাখবে এবং যে কোনো ধরনের অপব্যবহার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

প্রস্তাবিত নতুন এই আইনটির কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। যেমন, ৮০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি, রিকশা, মোটর রিকশা এবং ট্রাক্টর কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। তবে, বড় ট্রাক এবং বাস কেনার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঋণ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি যদি সঠিকভাবে কর রিটার্নে প্রকাশ করা হয়, তবে তার লেনদেনে কোনো বাধা থাকবে না।

অন্যদিকে, যারা বিদেশে বসবাস করেন এবং নন-রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত, তারা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন না। এছাড়া, যদি কোনো অঘোষিত সম্পদ থাকে যা রেমিটেন্স বা উত্তরাধিকারের সাথে সম্পর্কিত, তবে সেটি সঠিকভাবে ঘোষিত হলে এফবিআর (ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউ) কোনো অভিযোগ করবে না।

এদিকে এফবিআরকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। তারা এখন চুক্তিভিত্তিক অডিটর এবং বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে কর নিরীক্ষণ, তদন্ত ও মূল্যায়ন করতে পারবে। এছাড়া, অযোগ্য ব্যক্তির আর্থিক লেনদেনগুলোর ওপর নজর রাখতে সক্ষম হবে, যাতে কর ফাঁকি রোধ করা যায় এবং করের পরিমাণ সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়।

নতুন এই আইনটি পাকিস্তানের কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এবং দেশের অর্থনীতি উন্নত করতে সহায়তা করবে, তবে এর সাথে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসা ও নারীদের ওপর এই আইনটির প্রভাব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে বিএনপি : সেলিম ভূঁইয়া

ওড়িশায় ভারী বৃষ্টি, ভূমিধসে নিহত ২

আইফোন কিনতে কিডনি বিক্রি করা সেই তরুণ কেমন আছেন?

বিতর্কিত বিচারে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান

ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

যেভাবে ফিটনেস ধরে রেখেছেন আলিয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত মদপানে দুজনের মৃত্যু

ওমরাহর নিয়মে ব্যাপক পরিবর্তন, মানতে হবে যে ১০ বিষয়

রোজা শুরু হতে বাকি আর কত দিন, জানালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

ফোনের চার্জিং পোর্টে এই ৫টি জিনিস কখনোই লাগাবেন না

১০

শহীদ মিনারে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

১১

জুবিনের স্ত্রীর কাছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, যা জানা গেল

১২

নিষেধাজ্ঞার আগে মাওয়ায় ইলিশ খাওয়ার হিড়িক

১৩

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তিতে সমর্থন জানালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

১৪

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৫

মহাসড়কে ডাকাতির ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

১৬

সিরিজের সাফল্যের পর যা বললেন আরিয়ান

১৭

‘সর্বকালের সেরা’ বাছাই করলেন আলভারেজ — কারা আছেন তালিকায়?

১৮

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

১৯

অক্টোবরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

২০
X