পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে ১৪ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই ‘ভারতীয় মদতপুষ্ট’ এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
বুধবার (৪ জুন) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)। খবর জিও নিউজ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে প্রক্সি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের দাত্তা খেল এলাকায় পরিচালিত সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে ১৪ জন ভারতীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীকে নিহত করা হয়েছে।
আইএসপিআর আরও জানায়, এ ধরনের অভিযান পাকিস্তানজুড়ে চলমান থাকবে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
অভিযান নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কার্যালয় থেকেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, তারা মানবতার শত্রু। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোদের এভাবেই জবাব দেওয়া হবে।
পাঁচ দিন আগেও এমন একটি অভিযানের খবর দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানের কাছি জেলায় পরিচালিত এক অভিযানে পাঁচ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়। সেবারও আইএসপিআর তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছিল, নিহতরা ভারতের মদতপুষ্ট গোষ্ঠীর সদস্য।
গত কয়েক বছরে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়া মূলত পাকিস্তান তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর ঘাঁটি অঞ্চল। অন্যদিকে বেলুচিস্তানে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, টিটিপি ও বিএলএ— উভয়েরই চূড়ান্ত লক্ষ্য দেশটির দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
২০২১ সালের পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই ৪৪টি বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। এই এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৯২৭ জন সাধারণ নাগরিক। পালটা অভিযানে নিহত হয়েছে প্রায় ৯৩৪ জন সন্ত্রাসী।
এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটে গত ২২ এপ্রিল, ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে। এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৫ জন পর্যটক নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের গোষ্ঠী, যা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার একটি উপশাখা বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে। জবাবে পাকিস্তানও দাবি করে, তাদের অভ্যন্তরে সক্রিয় টিটিপি ও বিএলএ গোষ্ঠীগুলো আসলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মদদে কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ‘সন্ত্রাসবিরোধী পালটা ন্যারেটিভ’ দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। প্রকৃতপক্ষে, এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বৈরিতা ও সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে উভয়পক্ষই সন্ত্রাসবাদকে একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন