কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মুসলিম দেশগুলোর যৌথবাহিনী গঠনের ইঙ্গিত, থাকবে পাকিস্তানও

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা যেন এক অশেষ ধারাবাহিকতা। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন কিংবা ইয়েমেন—যেখানেই চোখ রাখা যায়, সেখানেই আগুনের লেলিহান শিখা। তবে সাম্প্রতিক দোহা হামলা পরিস্থিতিকে এক নতুন মোড় দিয়েছে। কাতারের রাজধানীতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুধু হামাসের বৈঠককে লক্ষ্য করেই হয়নি, বরং পুরো আরব বিশ্বকে যেন প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছে।

কাতারে এই হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে আরব দেশগুলো। জরুরি বৈঠকে বসেন বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ার বিষয়টি সামনে আনেন।

এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, যদি জাতিসংঘের বাইরে এমন কোনো কার্যকরী বাহিনী গঠিত হয়, তাহলে পাকিস্তান তা‌তে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে। মঙ্গলবার, (১৬ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয় সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

দার বলেন, পাকিস্তানের ‘বিশাল এবং কার্যকর’ সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, যা প্রচলিত যুদ্ধে সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই যদি কোনো বহুজাতিক ব্যবস্থা গঠিত হয়, যেখানে সদস্যরা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখে, পাকিস্তান সেখানে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বাহিনীকে আক্রমণের জন্য নয়—শান্তি প্রতিষ্ঠা, আগ্রাসী শক্তিকে থামানো ও দখলদারিত্ব রোধের জন্য গঠন করা উচিত।

সাক্ষাৎকারে দার আরও বলেন, এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে এক ধরনের কঠোর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ বা নিষেধাজ্ঞাও প্রয়োগ করা যেতে পারে, যাতে কোনো রাষ্ট্র তাদের কথা না শুনলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। তিনি বলেন, আরব দেশ ও আরব লীগের মধ্যে এই ব্যাপারে আলোচনা চলছে এবং এটি একটি যৌক্তিক প্রস্তাব।

তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়—পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে পাকিস্তানের কী ভূমিকা হবে? তাতে দার বলেন, পাকিস্তান উম্মাহর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে; পারমাণবিক অস্ত্র কেবল প্রতিরোধের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় এবং ব্যবহার করার ইচ্ছা নেই। তবে তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের ‘বড়, সুপরিচিত ও কার্যকর’ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী রয়েছে এবং প্রয়োজনে প্রচলিত পদ্ধতিতেও প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা সম্ভব।

আল জাজিরার উপস্থাপক যখন নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্ক ও ২০১১ সালের ওসামা বিন লাদেন হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টানেন এবং প্রশ্ন করেন—কোনো শক্তিশালী দেশের হামলার শিকার হলে পাকিস্তান কি একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে?—ইসহাক দার জবাবে বলেন, ‘আমরা আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতায় হস্তক্ষেপ বরদাশত করব না। ছোট অথবা বড়—যে দেশই হোক না কেন আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাব।’ তিনি যুক্ত করেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে থামাতে কার্যকর কিছু করেনি, তবু কিছু ঘটনা—যেমন ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়—যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রেখেছ।

কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে দার বলেন, কাতারে হামলা অযৌক্তিক এবং “দস্যুবৃত্তি” বলে তিনি অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল বহু দেশে হামলা চালিয়ে এসেছে অথচ আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলো তার ওপর কার্যকর হচ্ছে না। তাই তিনি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সমসাময়িক সংস্কারের প্রয়োজন যে ভীষণ তা বারবার বলেছেন।

দার বলেন, ‘বিশ্বে শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রস্তাব বছরের পর বছর উপেক্ষিত থেকে যায়। গাজা ইসরায়েলের হাতে আর কাশ্মির ভারতের হাতে—এমন পরিস্থিতিতে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় কী আশা করা যায়?’ তিনি যুক্ত করেছেন, সব রাষ্ট্র—বড় হোক বা ছোট—সমান মর্যাদা পাওয়া উচিত।

গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে দার কূটনীতি ও আলোচনাকেই প্রধান সমাধান হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, আলোচনা সময় নেবে, কিন্তু আন্তরিক হলে সমাধান সম্ভব। অন্যথা, নেপথ্যে খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে কোনো সমাধান মিলবে না।

অবশেষে ইসহাক দার আবারও জোর দিয়েছেন—পাকিস্তান শান্তি চায় এবং পারমাণবিক অবস্থানের কারণে অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চায় না। তবু নাগরিকদের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যখন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রভাব কমে যায়, তখন বিকল্প ব্যবস্থা বা প্রয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপের দরকার হতে পারে—এমনটাই তার দৃঢ় অবস্থান।

সূত্র : ডন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ঘোষণা

পাকিস্তানের এশিয়া কাপ অভিযানে নতুন বিতর্ক!

বিএনপি-যুবদলের তিনজনকে অব্যাহতি

রাব্বানীর জিএস পদ অবৈধের সুপারিশে রাশেদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ পুলিশকে চীন দূতাবাসের কম্পিউটার উপহার

নানা কর্মসূচিতে রাজধানীতে বিশ্ব নরসুন্দর দিবস পালিত

সেতু বিভাগের সচিবের জিআইসিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ

জামায়াতের সঙ্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের বৈঠক

ঘুমের মধ্যেই না ফেরার দেশে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড

ভাঙ্গায় সরকারি দপ্তরে নাশকতাকারীদের বিচারের দাবিতে বিএনপির শান্তি মিছিল

১০

গলায় বাদাম আটকে নবম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু

১১

‘ঋণে জর্জরিত মানুষটির চল্লিশা যারা খেলেন, খাবার কীভাবে তাদের পেটে নামল’

১২

এবার দেশের বাজারে আরও বাড়ল স্বর্ণের দাম

১৩

পৃথক ফৌজদারি ও পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করল সরকার

১৪

আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব : গণতন্ত্র মঞ্চ

১৫

শুরুতে ঝড়, শেষে ম্লান বাংলাদেশ

১৬

টাঙ্গাইলে সরকারি চাল উদ্ধার

১৭

১৭ বিয়ে করা সেই বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

১৮

অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে : জুলাই মঞ্চ

১৯

এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ালে কত টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে পাকিস্তান?

২০
X